ঢাকা বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

শীতল পাটির চাহিদা কমলেও হাল ছারেননি কারিগররা

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৬:৩৬ পিএম

শীতল পাটির চাহিদা কমলেও হাল ছারেননি কারিগররা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

"শীতলপাটির বিছানায় সুখ খুঁজতেন মানুষ" কালক্রমে এর কদর কমলেও সিরাজগঞ্জের  রায়গঞ্জে ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও দরবস্ত গ্রামে শতাধিক পরিবার এখনও এ পাটি তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত। শীতলপাটি নাম শুনলেই যেন দেহে শীতল অনুভূতি তৈরি হয়। নিপুণ হাতে নারীরা বোনেন শীতলপাটি। নানা নকঁশার এ পাটির কদর দেশজুড়ে। দুই দশক আগেও গ্রীষ্মকালে গ্রামের ঘরে ঘরে এর অনেক ব্যবহার ছিল।

চাহিদা কমলেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পাটি তৈরি করছেন অনেকে। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যগত কুটিরশিল্প। মুর্তা বা পাটি বেত বা মোস্তাক নামক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে এটি তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামে মাদুর ও চাদরের পরিবর্তে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। সাজ সজ্জা করা মাদুরকে নকঁশিকাথা পাটিও বলা হয়।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া ও দরবস্ত গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এক সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে শীতলপাটি তৈরি করে নিতেন। 

সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়ির নারীরাই তৈরি করতেন নান্দনিক পাটি। এলাকাগুলোতে কয়েক দশক আগেও আয়ের প্রধান উৎস ছিল শীতলপাটি। গরমে প্রশান্তি পেতে শীতলপাটি ব্যবহার করলেও বিয়ে, গায়ে হলুদ, খাৎনাসহ নানা অনুষ্ঠানে এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।

শীতলপাটির গ্রাম ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্লাস্টিক পাটির আগ্রাসনে এ পাটির কদর দিন দিন কমতে শুরু করেছে। পাটি বুনে একসময় যাদের সংসার চলত, তারা এখন এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আটঘরিয়া ও দরবস্ত এলাকায় এখনও শতাধিক পরিবারের নারীরা পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সময় ও খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এখন আর এ কাজে লাভ হয় না বলে জানান তারা।

পাটি তৈরির কারিগর কল্পনা ,পাপ্পু  সরকারসহ কয়েকজন জানান, এখানে শীতলপাটি,বিছানার পাটি ও আসন পাটি তৈরি করা হয়।

ধানগড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামের টুম্পা রানী সরকার বলেন, একটি পাটি বানাতে অন্তত সাত দিন সময় লাগে। বিছানায় ব্যবহারের একেকটি শীতলপাটি বিক্রি হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। দিন দিন চাহিদা কমায় তারাও কম তৈরি করছেন। একই এলাকার বুলবুলি  রানী সরকার বলেন, শীতলপাটির উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম বাড়ছে না। মানুষের চাহিদা দিন দিন কমছে।

তবুও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৈরি করছেন। আগে গ্রামের হাটে পাটির কদর থাকলেও এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে আসায় গরমেও ব্যবহার কমেছে। এখন গাজীপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকার এসে পাটি নিয়ে যান।

পাটির তৈরার কারিগররা বলেন, অনেকে পুঁজির অভাবে কাজ কম করে। চাহিদা কমতে থাকা এবং কারিগরদের পুঁজির অভাবে এ কাজে মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে।

এবিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইলিয়াছ হাসান বলেন, ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প শীতলপাটিকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।


 

আরবি/জেডআর

Link copied!