ওয়াকফ প্রশাসন ও লাকসাম উপজেলা ভূমি অফিসের কারসাজিতে বেদখল হয়ে গেছে উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব, নারী শিক্ষার অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর জাদুঘরের প্রধান প্রবেশ পথ। গত কয়েকদিন পূর্বে স্থানীয় ছৈয়দ আলী বেআইনীভাবে দেওয়াল তুলে বন্ধ করে দেয় ঐতিহাসিক এই প্রবেশপথ। অথচ বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে আদালতে মামলা বিচারাধীন। যার নং ৭৩/২০২৪। যাতে বিবাদী রয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সচিব ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক।
কুমিল্লার বিজ্ঞ সহকারী জজ বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উপজেলা সহকারী কশিনার (ভূমি) সিফাতুন নাহার একটি দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করেন। যাতে প্রক্ষান্তরে নবাব বাড়ির প্রবেশপথের মালিকান ছৈয়দ আলীকে দেওয়া হয়। যার পরিপেক্ষিতে ছৈয়দ আলী আইনের তোয়াক্কা না করেই গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ এসিল্যান্ড সিফাতুন নাহারের উপস্থিতিতে পাকা দেওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে নবাব বাড়ির প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আতাউর রহমানের টেলিফোনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন।
যার প্রেক্ষিতে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার কায়সার হামিদ তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার স্মারক নম্বর ০০১.২০২৪-৯৫৯, তারিখ ৬.১১.২০২৪। যার মাধ্যমে এসিল্যান্ড সিফাতুন নাহার, সার্ভেয়ার মাজেদ ও তহসিল অফিসের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএস নকশায় নবাব বাড়ির পুর্বদিকের গেটে পাকা ইমারত দৃশ্যমান। ছৈয়দ আলীর দলিলে বর্ণিত চোহদ্দি উত্তরে হল সে দখল করতে এসেছে দক্ষিণ প্রান্তে। হিস্যা অনুযায়ী দলিলদাতা সৈয়দ রফিকুল হক ৫৯৯৩ দাগে ১-ডিং ৯ সেন্ট জায়গার মালিক ছিলেন। কিন্তু ভূমিদস্যু ছৈয়দ আলী জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি অফিস ও তহশিলের সহযোগিতায় খারিজ করিয়েছেন ২.৭৫ ডিং জায়গা। এসব অনিয়ম এতদিন রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এমনকি আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনেও বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
জানা গেছে, সরকারি খাস ও নবাব ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ স্টেটের রাহে লিল্লাহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে বিএস খতিয়ানভূক্ত করেছেন ছৈয়দ আলী। স্থানীয় ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ার ও তহসিলের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে এসব জায়গার খাজনাও পরিশোধ করেছেন তিনি।
মিডিয়ায় নবাব বাড়ির পূর্ব দিকের গেটের জায়গা বেচাকেনার সাথে সৈয়দ রফিকুল হকের নাম আসায় এ ব্যাপারে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার যুক্তরাষ্ট প্রবাসী কন্যা সৈয়দ নাসরিন রাব্বানী। তিনি টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, নবাব বাড়ির ঐতিহাসিক প্রবেশ পথের জায়গা বিক্রির সাথে আমার বাবাকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে মোটেও সঠিক নয়। জীবদ্দশায় আর আব্বা ও আম্মা আমাদেরকে কিছুই বলে যাননি। আমার পিতা ও আমরা আর্থিকভাবে এত অস্বচ্ছল ছিলামনা যে নিজের বাড়ির প্রবেশপথের জায়গা বিক্রি করতে হবে।
সৈয়দ নাসরিন রাব্বানী আরো বলেন, অভিযুক্ত ছৈয়দ আলী ও তার পরিবার আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। সেই সুবাদে বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সাথে এই ধরনের আরো কিছু জালিয়াতি ইতিপূর্বও সে করেছিল। সর্বশেষ আমার মরহুম পিতাকে জড়িয়ে নওয়ার বাড়ীতে গাড়ী নিয়ে প্রবেশের একমাত্র পথটি বন্ধ করে শুধু জালিয়াতি নয়, আইনের প্রতি তার দৃষ্টতার আরেকটি চূড়ান্ত উদাহরণ। এ ব্যাপারে ছৈয়দ আলীর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সরকার ১৯৮৭ সালে এক গেজেটের মাধ্যমে নবাব ফয়জুন্নেছা স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ও ততসংলগ্ন ৪.৫৪ একর প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। যা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। কিন্তু রহস্যজনক কারণে লাকসাম ভূমি অফিস সরকারী গেজেটভূক্ত পত্নতত্ত্ব সম্পদ চিহ্নিত ও উদ্ধারে উদাসীন। পশ্চিমগাঁও মৌজার যাবতীয় আরএস খতিয়ান লাকসাম ভূমি অফিস থেকে চুরি হওয়ার ভূয়া বিএস রেকর্ড এর মাধ্যমে চলছ সরকারী খাস ও ওয়াকফ এস্টেটের রাহে লিল্লাহ সম্পদ দখল উ্যসব। লাকসাম ভূমি অফিসে এসব ভূয়া বিএস রেকড চ্যালেঞ্জ করার জন্য আরএস নকশা ও খতিয়ানের কোন তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় না। অবিলম্বে নবাব ফয়জুন্নেছা জাদুঘরের পুর্ব দিকের ঐতিহাসিক গেটটি খুলে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :