বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

মন্দির শ্মশানের জমি দখল করে সাবেক এমপির বিলাসবহুল বাংলো বাড়ি

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

মন্দির শ্মশানের জমি দখল করে সাবেক এমপির বিলাসবহুল বাংলো বাড়ি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কাঁসাদহ গ্রামের মন্দির, শ্মশান ঘাট এবং কয়েকটি গ্রামের জন সাধারনের একমাত্র চলাচলের রাস্তার জমি জবর-দখল করে অত্যাধুনিক বাংলো বাড়ি তথা আমোদ-ফূর্তির ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল ৪ আসনের সদ্য বিলুপ্ত সংসদ সদস্য পঙ্কজ কুমার দেবনাথের একান্ত সচিব বা সহযোগী স্বপন কুমার দেবনাথ এর বিরুদ্ধে।

এলকাবাসী জানান, বাড়িটি যদিও স্বপন দেবনাথের নামে প্রচারিত মুলত বাড়িটির মুল মালিক সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। শ্মশান ঘাটের পাশে থাকা ৬ গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা অচর্নাকারীদের একটি কালী মন্দির ও কাসাদহ গোয়ালখালী গ্রামের সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিও দখল করে নেয়া হয়েছে এই আমোদ ভবন তৈরির জন্য। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু দখলকারীরা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না কেউ। বিগত কয়েক বছর আগে স্বপন কুমার দেবনাথ নামে এক ব্যক্তি উত্তর কাশাদহ, দক্ষিণ কাঁসাদহসহ গোয়ালখালী, রিশাদী ও নবগ্রাম এলাকার লোকজনের রাস্তার কিছু অংশ, স্থানিয় কালী মন্দির, শ্মশান ঘাট ও পূজারীরা যে শত বছরের বটগাছের নিচে আশ্রয় নিতো তা দখল করে একটি অত্যাধুনিক বাংলো বাড়ি তথা আমোদ ভবন নির্মাণ করেন বরিশালের সাবেক এমপি পঙ্কজ কুমার দেবনাথ। যে বট গাছ ঘিরে রয়েছে শত বছরের সনাতন ধর্মাবলীদের পূজা অর্চনার স্থান হিসেবে পরিচিত। আজ তা বিলিনের পথে।

স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতার দাপটে ধরাকে স্বরা মনে করতেন পঙ্কজ দেবনাথের সহযোগী স্বপন কুমার দেবনাথ ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। তারা বাংলো বাড়ি করার পাশাপাশি গ্রামের শতাধিক বিঘা জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন এমন অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। তাদের এসব কর্মকান্ডের স্থানীয় একমাত্র সহযোগী প্রদীপ কুমার দেবনাথ বাংলো বাড়ি দেখা শোনার কাজে নিয়োজিত থাকার সময়ে নানাবিধ অপকর্মের সাথে তারাও জড়িয়ে পড়ে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে মদ ও সুন্দরী নারী নিয়ে ফুর্তিতে মেতে উঠতেন তারা এমন অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। তাদের এই আয়োজনে পঙ্কজ কুমার দেবনাথও আসতেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তারা উক্ত এলাকায় স্থানিয় প্রশাসন কিংবা কোন স্থানিয় জন প্রতিনিধিকেই পাত্তা দিতেন না।

এতে স্থানিয় জনমনে চরম ক্ষোভ ও বিতৃষ্ণা তৈরি হলেও সময়ের কারণে কিছুই করার সাহস পাননি তারা। ইতিমধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে পঙ্কজ কুমার দেবনাথ সরকারের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনের বিরোধিতা শুরু করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা শিবালয় ঘাট এলাকায় জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করলে পঙ্কজ
কুমার দেবনাথ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আড়পাড়া মোড়ে অবস্থান গ্রহণ করে সশস্ত্র প্রস্তুতি নেয়। তাদের এমন সশস্ত্র প্রস্তুতি দেখে সাহসী হয়ে এবং তাদেরই নির্দেশে পাটুরিয়া ঘাটে মিছিলকারী এলাকার সাধারণ ছাত্র-জনতা কে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে নৌ-ফাড়ি পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই রফিক নামের একজন নিহত হয়। নিহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিছিল সহকারে ছাত্র জনতা শিবালয় থানা এলাকায় গিয়ে মিছিল শেষ করার প্রস্তুতি নেয়।

ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এমন খবরের ভিত্তিতে উত্তেজিত জনতা শিবালয় থানা এবং উত্তর কাশাদহ, দক্ষিণ কাসাদহ ও গোয়ালখালী, রিশাদী, রুপসা, নালী, পাটুরিয়াসহ অন্য গ্রামের লোকজন হামলা করে স্বপন কুমার দেবনাথ এর কুখ্যাত বাংলা বাড়ি। চরম উত্তেজিত ছাত্র-জনতা শিবালয় থানা ও বাংলো বাড়ী তথা প্রমোদ ভবনটি জ্বালিয়ে দেয়।

উক্ত বাড়ীর কেয়ারটেকার সুমন বলেছেন, হাজার হাজার লোকজন বাংলোর দিকে আসছে দেখে আমিসহ অন্যান্য কর্মচারীরা যে যার মত পালিয়ে যাই। হামলা কারা করেছে তা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না সুমন। এত মানুষের ভিড়ে কারো কথাই আলাদা করে সে বলতে পারেনি। কারা বাড়িতে হামলা করেছে ভাঙচুর করেছে আগুন দিয়েছে তা না জানলেও ওই ঘটনায়

বিএনপির নেতা কর্মীদের নাম উল্লেখ করে এবং একই সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয় অংশ গ্রহণকারীদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছে স্বপন কুমার দেবনাথ। মামলায় আসামি করা হয়েছে যে ব্যক্তিদের, যারা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ কাতারের মিছিল কারী। স্বপনের কর্মচারী জাহাঙ্গীর কেও আসামি করা হয়েছে যাতে গোপন কোন কিছুই জাহাঙ্গীর ফাস করতে না পারে।

এদিকে শ্মশানঘাট দখল করে বাংলো বাড়ি ও পূজা অর্চনার জায়গায় দখল করে আমোদ ফূর্তির জায়গা নির্মাণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় ছয়/সাত গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ।

তারা স্বপন কুমার দেবনাথ ও তার সহযোগী প্রদীপ কুমার দেবনাথ এর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে ছয় সাত গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বাক্ষর রয়েছে ফোন নাম্বার সহ। তারা কালী মন্দির, শ্মশান ঘাট ও জনগনের চলাচলের রাস্তাটি দখল মুক্ত করার পাশাপাশি স্বপন কুমার দেবনাথ ও প্রদীপ কুমার দেবনাথ এর শাস্তি দাবি করেছেন। এসব ব্যাপারে উক্ত গ্রামের শতাধিক মানুষের কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এই বিষয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছেন, বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব ব্যাপারে বরিশাল ৪ আসনের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে মুটোফোনে পাওয়া যায়নি।

মুটোফোনে স্বপন কুমার দেবনাথ এসব বিষয়ে বলেন, আমি কোন মন্দির ও শ্মশানের জমি দখল করি নাই। জমিগুলো আমি কিনেছি। কিন্তু কত শতাংশ কিনেছে সেটা মাপা নেই বলে তা বলতে পারছি না। একই বিষয়ে শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, আমি এসব একাধিক বার উপজেলা আইন-শৃংখলা মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে কে কোন প্রদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখন স্বাভাবিক অবস্থায় বিষয়টি মিমাংসা হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

এখানে উল্লেখ, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্তি কালীন সরকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু এই ক্ষেত্রে শিশু কিশোরসহ মামলার আসামিরা সরকারের এই ঘোষনার সুবিধা হতে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন বিষয়টি নিয়ে এলাকার গুঞ্জন এর সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহল আশা করছেন এই বিষয়টির দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সুনজর দিবেন এতে ছয় সাত গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়সহ ছাত্র জনতা বৈষম্য বিরোধী
আন্দোলনকারীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!