ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪

উপকূল থেকে হারাচ্ছে শরতের অপরূপ সৌন্দর্য কাশবন!

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম

উপকূল থেকে হারাচ্ছে শরতের অপরূপ সৌন্দর্য কাশবন!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কবি জীবনন্দ দাশ শরৎকে দেখে বলেছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’। শরতের এই অপরূপ রুপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই সিদ্ধান্ত নেন।

ষড় ঋতু অনুসারে ভাদ্র-অশ্বিন মাস জুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। গত কয়েক যুগ ধরে দেখা গেছে, শরৎকাল এলেই গ্রাম বাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো দোলখেলা। শরতে কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো বাতাসে। শরতে প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্যে এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেত।

শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই স্নিগ্ধতা। প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। শরতের কাশবন নদীর দুই ধারে, জমির আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন এই অঞ্চলের গ্রামগঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশবন চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ি, কল-কারখানা, শহরগুলো এভাবেই শরতের সৌন্দর্যকে ধীরে ধীরে বিদায় দিচ্ছে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘এ কাশবন চাষে বাড়তি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। আপনা থেকে অথবা বীজ ছিটিয়ে দিলেই কাশবনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। উঠানের পাশেও এই কাশবন চাষ করা যেতে পারে।’

কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি তৈরি করে থাকে। আর কৃষকরা ব্যবহার করে ঘরের ছাউনি হিসেবে। কিন্তু শহরের যান্ত্রিক সভ্যতার জীবনে এই অপরূপ দেখার সময় নেই।

বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কালের কন্ঠ‍‍`র শুভ সংঘের প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ মনোরঞ্জন বড়াল বলেন, ‘বেতাগীর বিষখালী নদীর তীরসহ, খাল-বিল, ক্ষেতের আল ও পুকুরপাড়সহ ইউনিয়নের ধানক্ষেতের মাঠে কাশবনে ভরপুর ছিল। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যাওয়া এবং উপলদ্বি না থাকায় কাশবন ও কাশফুল হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এর সৌন্দর্য বিলুপ্তি না হয়ে যায়, এই জন্য কৃষিবিদ ও চাষিরা কাশফুলের চাষ করা প্রয়োজন।’

আরবি/এফআই

Link copied!