বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম

প্রধান শিক্ষক সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করেন

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম

প্রধান শিক্ষক সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করেন

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হান্নান পাঠান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি সরকারী অনুদানের অর্থের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করাসহ সহকর্মী শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার এর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হান্নান পাঠানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা মৃত আব্দুস সাত্তার এর ভাতিজা ও মেয়ের জামাতা তিনি। 

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষকদের প্রণোদনা, বইপত্র লাইব্রেরির শিক্ষা উপকরণ, ছাত্রীদের শৌচাগার উন্নয়ন, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি উন্নয়ন এই পাঁচ খাতে সরকারী অনুদান আসে ৫ লাখ টাকা। শিক্ষকদের প্রণোদনা খাতের ১ লাখ টাকার অনুদানের হিসাব ঠিক থাকলেও বাকি ৪ টি খাতের হিসাবে গড়মিল। ভাউচার থাকলেও নেই মালামাল।

এর মধ্যে বইপত্র, লাইব্রেরি ও শিক্ষা উপকরণ খাতে সরকারী অনুদান ছিল এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যে নয়ছয় করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। পাঁচ শতাধিক নতুন বই ক্রয় করেছেন এমনটা জানান প্রধান শিক্ষক। পরে বই কেনার প্রমাণ চাইলে তিনি ৪০০ টি বই ৬৫ হাজার টাকায় ক্রয়ের ভাইচার দেখালেও লাইব্রেরিতে বইগুলো দেখাতে পারেন নি তিনি। আসলে বই ক্রয়ের নামে এই অর্থ নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন বলে সংশ্লিস্ট সূত্র জানান।

অনুদানে ছাত্রীদের শৌচাগার উন্নয়ন খাত বাবদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বাজেট ছিল। এই অর্থের টাকা দিয়ে ছাত্রীদের শৌচাগারের পরিবর্তে শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষের সাথে যুক্ত করে শৌচাগার নির্মাণ করেন তিনি। এই শৌচাগার ছাত্রীরা ব্যবহার করতে পারছে না। এটা প্রধান শিক্ষক তার নিজের সুবিধার জন্য তার বসার চেয়ার-টেবিল থেকে চার-পাঁচফুট দূরে তৈরি করেছেন। নিম্নমানের কাজ করে এখানেও প্রায় অর্ধ লাখ টাকার চেয়ে বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিলিটি খাতে ৫০ হাজার টাকার অনুদান ছিলো। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দুইটি হেয়ারিং এইডের মূল্য ১০ হাজার টাকা এবং তিনটি হুইলচেয়ার ক্রয় বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। একটা হুইলচেয়ার ও স্কুলে পাওয়া যায়নি। দশ মাস আগে এগুলো ক্রয় করে ভাউচারের কাগজ নিয়ে চলে এসেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত মালামাল বিদ্যালয়ে আনেননি। ভুয়া বাউচার তৈরি করে খরচ দেখিয়ে এখানেও ৪০ হাজার টাকার মতো নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন আব্দুল হান্নান।

তাছাড়া স্কুলের আয় ব্যায়সহ ভর্তি ফি পরিক্ষা ফির মধ্যেও নয়ছয় করে অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি। স্কুল ফান্ড থেকে শিক্ষকদের কোনো সম্মানি না দিয়ে নিজেই সব অর্থ ভোগ করেন। নিজের নাম ঠিকানা কাগজে লিখে দেওয়ার কথা বললে তিনি এলার্জী জনিত সমস্যার কারনে ঠিকমতো লিখতে ও পড়তে পারেন না বলে জানিয়ে অফিস সহকারীকে দিয়ে নিজের নাম ঠিকানা কাগজে লিখে প্রতিবেদককে দেয়। এমন অবস্থায় তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছেন তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে । তার শ্বশুর বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় তার নিয়োগ নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। শ্বশুর প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে তিনি এক প্রকার স্বৈরাচারী আচরন করে থাকেন। তার নির্দেশ অমান্য করার সাধ্য কারো নাই, তার অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ভয়ে প্রকাশ্যে শিক্ষক ও কর্মচারীরা কথা বলতে পারেন না। এক কথায় ছলেবলে কৌশলে ১৯ বছর যাবৎ প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখলে রেখেছেন তিনি। স্কুলটি এমপিও হওয়ার ৫ বছর চলতে থাকলেও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।

স্কুলের শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের দাবি জানান সহকারী শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষক এখানে খুব নির্যাতিত ও অত্যাচারিত। কি বলবো দুঃখের কথা, ওনি নিজের ঠিকানাটা পর্যন্ত লিখতে পারেনা। শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, মা বাবাকে নিয়ে গালমন্দ করে। যাকে পছন্দ হয় তাকে মাসের পর মাস ছুটি দেয়। এখনো বর্তমানে দুইমাস যাবৎ এক টিচার অনুপস্থিত। আবার সে আসলে হাজিরা খাতায় সাক্ষার নিয়ে নিবে। স্কুল ফান্ড থেকে শিক্ষকদের এক টাকাও দেয়না বরং আমাদের কাছ থেকে কয়েকবার দশ হাজার আট হাজার করে চাঁদা পর্যন্ত নিছে। আমরা এখানে অতিষ্ঠ।প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে এসব করছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খাটিংগা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত  প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, সুযোগ ও সুবিধা হলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। হুইলচেয়ারসহ অন্যান্য মালামাল ৭ মাস আগে কিনেছেন কিন্তু এখনো তা দোকানে রয়েছে বলে তার দাবী। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তার ৫০ হাজার টাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি তার পকেট থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সময় সুযোগ করে দিয়ে দিবেন বলে জানান, এমন ভাবে প্রতিটি বরাদ্দকৃত খাতের অযৌক্তিক বর্ণনা দেন তিনি।

শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, স্কুলের আয় নেই, প্রতি বছর ব্যয় বেশি যার কারণে শিক্ষকদের বেসরকারি বেতন দিতে পারি না।বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে নিজের পকেট থেকে মাঝে মাঝে আরও দিতে হয়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, এ ব্যপারে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এমন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!