ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪

ভোলার ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের যত উদ্ভাবন

শিমুল চৌধুরী, ভোলা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

ভোলার ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের যত উদ্ভাবন

ক্ষুদে বিজ্ঞানী মো. তাহাসিন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যেই মুহুর্তে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে জেলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মো. তাহাসিন নামের এক শিক্ষার্থী আবিষ্কার করলো ‍‍`চাইল্ড সেফটি ডিভাইস‍‍`। প্রায় ৫০ গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটি যে শিশুটি ব্যবহার করবে সেই শিশুটি পানিতে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে শিশুর অভিভাবকের মোবাইলে কল চলে যাবে এবং তার বাসায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলার্ম বেজে উঠবে। এমনকি সেই শিশুটি ওই মুহুর্তে কোথায় আছে তাও জানা যাবে ডিভাইসটির মাধ্যমে। এতে করে পুকুরের পানিতে পরে গেলেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে ডিভাইস ব্যবহারকারী শিশুটি। এভাবেই কমে আসতে পারে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার। ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন আরও আবিস্কার করেছে ‍‍`লাইফ সেফটি ডিভাইস‍‍`। এই ডিভাইস ব্যবহারকারীর উপর কেউ হামলার চেষ্টা করলে হামলাকারী ২৫০ থেকে ৩৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক পাবে।

এ ছাড়াও তাহাসিন আবিস্কার করেছে ফার্মার সেফটি মেশিন। যা ব্যবহার করলে একজন কৃষক রোদ এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবেন। এ ছাড়া তীব্র গরমে দিবে বাতাস। সে আবিষ্কার করেছে ফার্মার হেল্পার মেশিন। এ মেশিনটি ব্যবহার করে কৃষকরা জমিতে পরিমাণমতো সার প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্ততঃ পাঁচ জন কৃষকের কাজ এ মেশিনটি একাই করতে পারে। এটা ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং পরিবেশবান্ধব। তার উদ্ভাবিত এ যন্ত্র ব্যবহারে আলাদা কোন খরচ হবে না।

চাইল্ড সেফটি ডিভাইস, লাইফ সেফটি ডিভাইস, ফার্মার সেফটি মেশিন কিংবা ফার্মার হেল্পার মেশিন-ই শুধু নয়, ক্ষুদে এ বিজ্ঞানী একে একে তৈরি করেছে ফার্মার এসিস্ট্যান্ট মেশিন, স্মার্ট থিপ টব সিকিউরিটি, স্মার্ট হর্ণ, স্মার্ট ডাস্টবিন, স্মার্ট ওয়াটার টেপ, ডোজ এলার্ম গ্লাস, স্মার্ট বৈদ্যুতিক টেস্টার, অটোমেটিক কার্টেইন অফেনার ও স্মার্ট শিপ স্টেবিলাইজার।

নিজের প্রচেষ্টায় নতুন নতুন আবিষ্কারে তাক লাগিয়েছে ক্ষুদে এই বিজ্ঞানী মো: তাহাসিন। ঢাকা মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজি এর ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তাহাসিন এ প্রতিবেদককে জানায়, ছোট বেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসরে সে উদ্ভাবনী বিষয়ে সময় কাটায়। তাহাসিনের আবিষ্কারে এলাকাবাসী প্রায়ই অবাক হয়। এই শিক্ষার্থীর আবিষ্কার ও উদ্ভাবনীতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে ক্ষুদে এ বিজ্ঞানী একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে এলাকাবাসী জানান। 

ক্ষুদে এ বিজ্ঞানী তাহাসিন বলে, আমার বাবা আ: হালিম স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক। আমাদের পরিবার তেমন সচ্চল নয়। আমার বাবা-মা কোন কিছু কেনার জন্য বা খাবারের জন্য যেই টাকা দিতেন সেই টাকা থেকে জমিয়ে এ আবিষ্কারগুলো তৈরি করতে ব্যয় করেছি। এ পর্যন্ত আবিষ্কারগুলো তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

তাহাসিনের বাবা স্থানীয় মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক আ: হালিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাহাসিনের স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। আমরাও তাকে আমার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করার।

তবে, তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভোলার প্রশাসন। ২ নভেম্বর শনিবার সকালে মনপুরার ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের উদ্ভাবনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাঠান মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান।

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাঠান মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান শনিবার বিকেলে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ২ নভেম্বর মনপুরা উপজেলায় তাহাসিনের বিভিন্ন উদ্ভাবনী দেখেছি। সবগুলো উদ্ভাবনী-ই ভালো ছিল। তিনি আরও বলেন, মনপুরার মতো একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে তাহাসিনের মতো একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও ক্ষুদে বিজ্ঞানীর এমন উদ্ভাবনী প্রশংসনীয়। সে এলাকায় একটি বিজ্ঞান ক্লাব করার কথাও ভাবছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তার সকল ভালো কাজে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের সাফল্যও কামনা করেন মনপুরার ইউএনও।

আরবি/জেডআর

Link copied!