ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪
বানিশান্তা যৌনপল্লী

যৌন কর্মীদের জীবন যেন টিস্যু পেপার

মেহেদী হাসান নয়ন, বাগেরহাট

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

যৌন কর্মীদের জীবন যেন টিস্যু পেপার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পশুর নদীর তীরে মোংলা বন্দরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা যৌনপল্লীর শেকড়ছেঁড়া, বাস্তুহীন নারীদের জীবন। বাস্তহীন এই দরিদ্র পাড়ার দরিদ্র এক যৌনকর্মী বললেন, এক সময় বানিসান্তার যৌনপল্লির অবস্থা ছিলো রমরমা। এখন খুব গরীবি হাওলাত। লোকজন এখানে আসতে চায় না। রাস্তাঘাটও নাই।

এ পল্লীর প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এখানকার ঘরবাড়ি। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস পল্লীর বাসিন্দাদের নাজেহাল করছে। পল্লীতে লোক না আসায় অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। তাদের দাবি সরকারি ভাবে যেন রাস্তা নির্মান করা হয় যাতে করে তাদের খদ্দের বাড়ে।

এখানে অধিকাংশ যৌনকর্মী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ভুগছে আর্থিক অসচ্ছলতায় বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে। সরকারি অনেক সহযোগীতাও তাদের ভাগ্যে জুটছে না। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু ভাগ্যোন্নয়নে কেউই তাদের পাঁশে দাড়ায়নি। যৌনকর্মীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

যৌনকর্মী ফাতেমা (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা সরকারিভাবে যে সাহায্য সহযোগীতা পাই তা খুবই অপ্রতুল। এজন্য সরকারি সুযোগ সুবিধা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। রাস্তাঘাট ও উন্নতি করতে পারে নাই। এখানকার স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভাল নয় বলে জানান তিনি। আমাদের জীবন টিস্যু পেপারের মত, ব্যবহারের পর তা ফেলে দেয়। আমারাও তো মানুষ। আমাদেরতো একটা জীবন আছে। আমাদের দাবি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হোক।

এখানে চল্লিশউর্ধ্ব প্রায় অর্ধ শতাধিক যৌনকর্মী কর্মহীন হয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এক সময়ে জৌলুস জীবন ছিল তবে এখন বয়ে বেড়াচ্ছেন কষ্ট মাথায় নিয়ে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। যৌনকর্মক্ষমতা হারিয়ে অন্যের ঘরে ঝি এর কাজ করছেন। পান থেকে চুন খসলেই কপালে জুটে নির্যাতন। এদের বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য সহযোগিতা কপালে জুটে তা খুবই অপ্রতুল। দু’চারজন যৌনকর্মীদের ঘরে ঝি এর কাজ করলেও সিংহভাগেরই পেট চলে চেয়েচিন্তে। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তারা।

আরেক যৌনকর্মী বলেন, দুর্গম এলাকা বলে এখানকার মেয়েদের ভাল চিকিৎসাও জোটে না। কেউ অসুস্থ হলে বাইরে নেওয়া দুষ্কর। অনেকে যৌন, চর্ম রোগে ভুগছে। ডাক্তার দেখাতে পারছে না। আমাদের তো কেউ ভাল চোখে দেখে না। আমি অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতি পারছি না। কিন্তু আমরাও তো মানুষ। আমাদের ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুল কলেজেও দিতে পারিনা। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করাতে পারছিনা। সরকারীভাবে আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার জন্য ভালো একটি বিদ্যালয় ও উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে হাসপাতালের ব্যবস্থা করার দাবি জানান এ যৌনকর্মীরা।

আরবি/জেডআর

Link copied!