পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলেছে বান্দরবান জেলার জনবহুল এলাকা লামায়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠা উপজেলার মিরিঞ্জায় বিভিন্ন ইকো রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। মনে হয় মেঘের সাথে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এই এলাকাটিকে সাজিয়েছে মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ। আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলো যেন সৌন্দর্যকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
সময়ের সাথে পিছিয়ে পড়া তিন পার্বত্য এলাকা পর্যটনের দিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও লামা উপজেলা পর্যটন খাতে সরকারি ও ব্যক্তিগত কোন উদ্যোগ না থাকায় এই উপজেলাটি পিছিয়ে পড়েছিলেন।
স্থানীয় জনসাধারণের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে কিছু উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে শুরু হয় পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা। লামা পৌরসভার প্রবেশ পথে মিরিঞ্জা নামক স্থানে সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশে পাহাড়ের এক কোণে ছোট্ট একটি মাচাং ঘর ও আকাশের নিচে কয়েকটি তাবুঘর দিয়ে শুরু হয় মিরিঞ্জা ভ্যালি নামের ইকো রিসোর্ট। শুরুতেই স্থানীয় পর্যটকরাই এই ইকো রিসোর্ট এর অপার সৌন্দর্যকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেন, যা পর্যটকদের নজরে আসে।
এর পর থেকেই ট্যুর গাইডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মিরিঞ্জা ইকো রিসোর্টের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ফলে পর্যটক বাড়ার সাথে সাথে মিরিঞ্জা ভ্যালির পাশে একে একে বাড়তে থাকে অনন্য রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মারাইংছা হিল, মিরিঞ্জা সানসেট, ডেঞ্জার হিল, লামা হিল স্টেশন, হিলস্কেপ রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট, মেঘ বেলা রিসোর্টসহ আরও বেশ কয়েকটি ইকো রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট। যা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পথ চলা শুরু করে। যেটিকে এখন দ্বিতীয় সাজেক ভ্যালি বলে পর্যটকরা অবহিত করেছেন।
বিগত দিনে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে তিন পার্বত্য এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যটকের প্রবেশাধিকার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা থাকাই ভ্রমন প্রিয়াসু পর্যটকরা পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। লামা উপজেলাটি বান্দরবান জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও এটি বিশ্বের বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি অবস্থিত। যার ফলে ভ্রমণ প্রিয়াসু পর্যটকরা অল্প খরচে পাহাড় ও সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন।
যার কারণে পর্যটকদের চাহিদার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। এপর্যটন শিল্পের উত্থানের সাথে সাথে এ এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে বেকার যুবকরা।
এ উপজেলায় ধীরে ধীরে পর্যটক বেড়ে যাওয়াই পর্যটকদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী রেস্টুরেন্ট, হোটেল-মোটেল ও যোগাযোগের জন্য পর্যটক পরিবহনের গাড়ি ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধা ও নিরাপত্তা জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ফলে পিছিয়ে পড়া এ জনপদ দ্রুত আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘুরতে আসা অনিক, আরমান ও রুপালী বলেন, এই ভ্যালিতে না আসলে বুঝতে পারতেন না প্রকৃতি এত সুন্দর। ভোর হলে মেঘের কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়া পাহাড়ে মন হারিয়ে যায়। এখানে এসে সাজেকের সৌন্দর্য উপভোগ করছি।
পর্যটন উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সারা বছর ভ্রমন পিয়াসু পর্যটকরা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি চেয়ে এখন বান্দরবানের লামাতে আসতে বেশি ইচ্ছুক, যার কারণ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও দ্বিতীয় সাজেক ভ্যালি খ্যাত লামার মিরিঞ্জা ভ্যালি। যেখান থেকে পর্যটকরা স্বল্প খরচে সমুদ্র ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে । সরকার যদি অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা ও চলাচলের রাস্তা সংস্কার করে তাহলে এই পর্যটন শিল্পকে আরো বেশি এগিয়ে নেওয়া ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :