বগুড়ার সারিয়াকান্দি চরাঞ্চলগুলোতে এক মাত্র পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। উন্নত বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্য বা মরুভূমি অঞ্চলের পরিবহনে ব্যবহৃত উটের অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও সারিয়াকান্দিতে এঁকেবেঁকে চলা নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, কৃষি পণ্যে, যাতায়াত এবং অসুস্থ রোগীকে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে ঘোড়ার গাড়িতে। এক সময় বালুকাময় চরাঞ্চলগুলোতে পরিবহনে গরু বা মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা হতো। সেই চিত্র কালের পরিক্রমায় বদলে যেতে শুরু করেছে ।
বর্তমান যুগে পণ্য পরিবহনের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়াতে যান্ত্রিক গাড়ির ওপর মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু সারিয়াকান্দি প্রত্যন্ত চরে নৌকার পাশাপাশি নদীর বুকে ধু-ধুময় বালুর চরে এখন পণ্য পরিবহনে অযান্ত্রিক ঘোড়ার গাড়িই মানুষের এক মাত্র ভরসা। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাটগুলো তেমন উন্নত না হওয়ায় এখানে যান্ত্রিক গাড়ি চলে না তাই চরবাসীকে নানা সময় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্ণিবাড়ী, কাজলা, চন্দনবাইশা, বোহাইল ইউনিয়ন যমুনা নদীবেষ্টিত চর এলাকা রাস্তাঘাট না থাকায় অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়িচালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছেন এ চর থেকে ওই চর।
জানা যায়, চরাঞ্চলে যান্ত্রিক যানবাহন না থাকায় আগের দিনের মানুষ প্রচণ্ড গরমে উত্তপ্ত বালুতে পায়ে হেঁটে অনেক পথ পাড়ি দিত এবং নিজেদের উৎপাদিত পণ্যগুলো মাথায় অথবা বাঁশের লাঠিতে করে ঘাড়ে নিয়ে বহন করত। কিন্তু ঘোড়ার গাড়ি উদ্ভাবনের পর চরাঞ্চলের উৎপাদিত কৃষি পণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ঘোড়া গাড়িটি ব্যপক ভূমিকা রাখছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা চর এবং নদীবেষ্টিত এলাকা। উপজেলার বাঙালি ও যমুনা নদী অন্যতম। বর্ষার সময়ে এই নদ-নদী তাদের চিরোচেনা রূপ-যৌবন ফিরে পায়, পানিতে তলিয়ে যায় প্রত্যন্ত চরের নিম্নাঞ্চল। এসময় চরবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে থাকে নৌকা। তবে শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। আর প্রত্যন্ত এসব চর এলাকার অনেক মানুষ ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
চরাঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে শুকনো মৌসুমে যমুনার চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এসব চরাঞ্চলে যান্ত্রিক কোনো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় পণ্য পরিবহনের ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বোহাইল, ডাকাতমারা, ইন্দুর মারা, ছোনপচা, নান্দিনা চরাঞ্চলের ঘোড়াগাড়ি চালকরা বলেন, গরুর গাড়িতে দুটি গরু বা মহিষ লাগায় খরচও বেশি হয় । আর ঘোড়ার গাড়িতে একটি ঘোড়া হলেই হয়। এতে খরচও কম পড়ে। চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় মালামাল পরিবহনে অন্য কোনো যানবাহন চলাচল সম্ভব হয় না। সহজেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষসহ মালামাল আনা নেওয়া করা হয়। চরাঞ্চলে সবসময় বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়েই থাকে। বর্তমান মরিচ চাষ হয়েছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ঘোড়ার গাড়ি করে বস্তা প্রতি ৩০ টাকা দরে ঘাট পাড়ে পৌঁছে দেই। এভাবে দিনে প্রায় ৫০ বস্তা পর্যন্ত ঘাট পাড়ে নিয়ে আসা যায়। তাতে প্রতিদিন আয় করি ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। ঘোড়ার খাওয়ার জন্য প্রতিদিন খরচ হয় ২৫০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলছে। সারিয়াকান্দির চরে ৫-৬ মাস চলে বহনের কাজ।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর ইউনিয়নের সানবান্দা গ্রামের মো. সোলেমান ও রাজু জানান, আমাদের বাড়ি অন্য জেলায় হলেও মাদারগঞ্জ ঘাট থেকে সারিয়াকান্দি ঘাট পর্যন্ত এবং বিভিন্ন চরে দুই থেকে আড়াই বছর ধরে আমরা ঘোড়া চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আচ্ছি। এখন যমুনা নদীতে পানি অনেক কম। চর জেগে উঠেছে উঠেছে বালু আর বালু। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের পণ্য ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে এপার থেকে ওপারে নিয়ে আসা যাওয়া করছি। এতে প্রতিদিন প্রায় ৭শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা আয় হয়। এতে আমাদের ভালোই আয় হয়।
আপনার মতামত লিখুন :