ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঝিনাইদহের ডাকবাংলোগুলো এখন সরকারি কর্মকর্তাদের দখলে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

ঝিনাইদহের ডাকবাংলোগুলো এখন সরকারি কর্মকর্তাদের দখলে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঝিনাইদহের জেলা এবং উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোগুলো এখন সরকারি কর্মকর্তাদের দখলে। তারা মাসের পর মাস থেকে চলেছেন অত্যাধুনিক ভিআইপি কক্ষে। কেউ কেউ নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক অঙ্কের ভাড়া দেন আবার কেউ মোটেই ভাড়া না দিয়েও থাকে। অথচ সেখানে কেয়ারটেকারের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। খোজ নিয়ে দেখা গেছে এ খাতে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র।

ঝিনাইদহে সরকারি কেসবচন্দ্র কলেজের দক্ষিণে অবস্থিত জেলা সদরের ডাকবাংলো। বিগত তিন বছরের নথিপত্র ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ ঘেটে দেখা যায়, এখানে নতুন ভবনে ভিআইপি কক্ষ রয়েছে ৪ টি।

সেখানকার রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কর্মরত মেহেদেী হাসান বলেন, বাংলোতে থাকা একটি কক্ষ সর্বক্ষণ রির্জাভ রাখা হয় এবং বাকিগুলো দেওয়া হয় ভাড়া। তার বলা তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৯ জুন বাংলোর কক্ষ (রুম) ভাড়া নির্ধারণ করে চার্ট (তালিকা) প্রকাশ করা হয়। ওই চার্টে স্বাক্ষর করেছিলেন জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও সচিব (জেলা পরিষদ) মুহাম্মদ রেজা আরিফিন সরকার। তালিকা অনুযায়ী জেলা সদরের বাংলোর ভাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য (ভিআইপি) এসি রুম প্রতিদিন ৪০০ টাকা, নন এসি (ভিআইপি) ২০০ টাকা, দুই সিট (বেড) বিশিষ্ট কক্ষ প্রতি সিট ১৫০ টাকা।

আবার উপজেলা বাংলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এসি কক্ষ (ভিআইপি) প্রতিদিন ৩০০ টাকা , নন এসি (ভিআইপি) ২০০ টাকা (প্রতিদিন) এবং  দুই সিট বিশিষ্ট কক্ষ প্রতি সিট ১৪০ টাকা। বেসরকারি ও স্বায়িত্বশ্বাসিত প্রতিষ্ঠান, সেক্টর করপরেশনের কর্মকর্তাদের জন্য আদালা রেটে ভাড়া আদায়ের বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী আনোয়ার হোসেন জানান, একজন কর্মকর্তা ডাকবাংলোতে টানা তিন দিনের বেশি অবস্থান করলে আমাদের নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুন আদায় করার বিধান রয়েছে। রেজিষ্টার খাতায় দেখা যায়, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সদ্য অপসারিত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জেলা সদরে অবস্থিত বাংলোতে ৩ নম্বর কক্ষে থাকেন (এসি ভিআাইপি)। গত ২০২২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি ওই কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন  (তত্বাবধায়ক)। প্রতি মাসে ভাড়া প্রদান করেছেন তাও আবার নাম মাত্র ছয় হাজার টাকা। হিসাব মতে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

চলতি (২০২৪) সেপ্টেম্বর মাসেও ওই কর্মকর্তা (তত্বাবধায়ক) কক্ষটি দখলে রেখেছেন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে প্রতি মাসে বারো হাজার টাকা হলে ঐ তত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলামের কাছে তিন লাখ ছিয়াত্তর হাজার টাকা পাওনা হয়। অথচ ২০২৪ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ওই কর্মকর্তা মাসিক ছয় হাজার টাকা হিসাবে ভাড়া প্রদান করেছেন।  নির্ধারিত ( প্রতি দিন চারশত) ভাড়ার অর্ধেক ( দুইশত টাকা) দিয়েছেন তিনি। এক পর্যন্ত তার কাছে এক লাখ আটাশি হাজার টাকা পাওনা রয়েছে তার  কাছে।

অপর দিকে ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু রাসেল ২০২১ সালের ৯ জুন থেকে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডাকবাংলোতে ভিআইপি ২ নাম্বার এসি রুমে থেকেছেন। কেয়ার টেকার মেহেদীর দেওয়া তথ্য মতে এক টাকাও ভাড়া প্রদাণ করেননি পুলিশের এমকর্মকর্তা। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো, শওকত হোসেন ২০২১ সালের ২৪ আগষ্ট থেকে ২০২২ সালের ২ আগস্ট পর্যন্ত জেলা সদর ডাকবাংলোর এক নাম্বার ভিআইপি এসি কক্ষে অবস্থান করেন। ওই সময়ে ৪০০ টাকার পরিবর্তে প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে ভাড়া প্রদাণ করেন তিনি।

বাংলোর সাবেক কেয়ারটেকার বাবুল (বর্তমান হরিণাকুন্ডু) অভিযোগ করে বলেন, ভাড়া চাওয়া মাত্রই মাদক কেস দিয়ে তাকে চালান করে দেওয়া হুমকি দিয়েছিলেন তিনি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)।

জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ৬টি ডাকবাংলো রয়েছে। সে গুলোর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ, তৈজষপত্র ক্রয় এবং কেয়ারটেকারদের বেতন খাতে প্রতিবছর খরচ হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সময়ে বাংলো গুলো নিমার্ণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কেয়ারটেকার মাসিক বেতন পান ষোলহাজার পাঁচশত টাকা। সেই হিসাবে ৬ জন কেয়ারটেকারের এক বছরে বেতন এগারো লাখ আটাশি হাজার টাকা। বিপুল অংকের এই টাকা জেলা পরিষদকেই প্রদাণ করতে হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে যে ভাড়া আদায় করা হয় তাতে একজন কেয়ারটেকারের বেতনও হয় না।

জেলা সদরের বাংলোটি অত্যাধুনিক, সেখানে পুরাতন একটি দ্বিতল ভবন (১১টি কক্ষ) এবং নতুন একটি দ্বিতল ভবন যাতে ৪টি কক্ষ রয়েছে। এদিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের বাংলোটি সদ্য বিলুপ্ত হওয়া জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-৩ ( কোটচাদপুর-মহেশপুর) আসনের সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজীর ব্যক্তিগত অফিস গড়ে তুলেছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বাংলো ছেড়ে চলে গেছেন সাবেক ওই এমপি।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সেলিম রেজা বলেন, বিনা ভাড়ায় থাকা কিংবা অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার কোনো  বিধান নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য চিঠি প্রদান করা হবে। বিধি মোতাবেক পাওনা আদায় করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!