কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন সৈনিককে এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষসহ সমাধির মাটি তার স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান।
কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশন এ যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। জাপানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ কাজে শুরু থেকেই সহায়তা করছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। কমনওয়েলথ গ্রেভইয়ার্ড কমিশনের পক্ষে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, ‘জাপানের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কুমিল্লায় আসে। বুধবার থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানের আছেন ২৪ জন। ফরেনসিক দল এ ২৪ সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে যাবেন। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এ সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরনো। এরইমধ্যে আমরা ১০ জনের দেহাবশেষ সমাধি থেকে উত্তোলন করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। কোনোটিতে তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। ২৮ বছরের এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি।’
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৮ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে ইসলাম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধধর্মের ২৪ জন, হিন্দুধর্মের ২ জন ও বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। এরমধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার ১, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬, মিয়ানমারের ১, বেলজিয়ামের ১, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের ১ জনের সমাধি আছে। প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকেরা সেখানে শ্রদ্ধা জানান।
আপনার মতামত লিখুন :