ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

স্বামী হত্যার বিচার ও কর্মসংস্থান চান নিহত মাসুদের বিধবা স্ত্রী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম

স্বামী হত্যার বিচার ও কর্মসংস্থান চান নিহত মাসুদের বিধবা স্ত্রী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গত শনিবার ৭ সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে ঔষধ কিনতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের উপর নির্মমভাবে হামলা করে দূবৃত্তরা। সেই রাতে তার মৃত্যু হয়। মাসুদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর খাসের হাট এলাকায়।

সোমবার তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। তার স্ত্রী, মা ও ভাইসহ এলাকার অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না মাসুদের উপর ঘটে যাওয়া এ নির্মমতা। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের আইনুযায়ী বিচার চান। স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা। বললেন স্বামীর রেখে যাওয়া এক মাত্র অবলম্বন মেয়েকে বড় করবেন, তাই তিনি কর্মস্থানের ব্যবস্থা চান সরকার কাছে। পাশাপাশি তার পাশে সবাই তার পাশে দাঁড়াবার আকুতি তার।

হামলার দিন মাসুদ ঔষধ কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজার গিয়েছিল। সর্বশেষ স্বামীর সাথে মোবাইলে
সন্ধ্যা সাতটার দিকে কথা হয় বিউটির। এসময় মাসুদ তাঁকে বলছিলো তিনি চা খেয়ে ঔষদ নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যেই বাসায় চলে আসছি। এর
ঘন্টাখানের পর আবারো যখন মাসুদের মোবাইলে ফোন দেন বিউটি তখন ফোন বন্ধ পান। এরপর একাধিকবার ফোন করেছিলেন, পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পান।

মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা বলেন, মামলা করার আগ্রহ পরিবারে নেই। থানা থেকে তাকে ফোন দেয়া হয়েছিলো, তিনি বলেছেন মাসুদের বড় ভাই আছেন, তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানিয়েছেন। যদিওআব্দুল্লাহ আল মাসুদের বড় ভাই, আয়েতুল্লাহ বেহেস্তী বলেন, মামলা করে যে বিচার পাব, সেই আশা নেই।ভাই হত্যার বিচার পাওয়াতো দূরের কাথা নিজেই পরিবার নিয়ে আতংকের মধ্যে আছি।তাছাড়া রাজশাহী যেতে ভয় পাচ্ছি। কারণ ছোট ভাই বহুদিন যাবত রাজনীতি না করেই এ ধরনের নির্মমতার শিকার হয়েছে। 

তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৪সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক থাকা কালে ২৯ এপ্রিল সকাল আটটার দিকে ক্লাশে যাবার সময় একদল দূবৃত্ত আমার ছোট ভাইকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে গুরুতর জখম করে। এতে তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বাম পা আংশিক ছিল। তাছাড়া দুই হাতে ও শরীরে অসংখ্যা আঘাত থাকায় তখন থেকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ পঙ্গুত্ব বরণ করে। কোন রকমে চলাফেরা করতো। এরকম করুন পরিস্থিতির মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সাম্প্রতিক কালে নিজের দূর্দশার কথা জানিয়ে সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট একটি আবেদন লিখেন। ২০২২সালে ৬ ডিসেম্বর প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তায়েফা সিদ্দিকী. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিকট পাঠানো চিঠিতে রা.বি.র সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দানের নির্দেশ দিলে ওই বছরই ২০ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রা.বি.র মেডিকেল সেন্টারের স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেন এবং ২২ ডিসেম্বর যোগদান করেন। আয়াতুল্লাহ বেহশতী আরো বলেন আমার ভাই পঙ্গুত্ব বরণের পর কোন ধরনের রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত ছিল না। চাকুরী করা অবস্থায় গত ২০২৩ খ্রী. ১১ এপ্রিল মোবারকপুর ইউনিয়নের চাতরা এলাকায় বিউটি আরা সাথে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে। সেই কন্যা সন্তান ও তার মায়ের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে ঔষধ কেনার জন্য বাসা থেকে বিনোদপুর বাজার গেলে দূবৃত্তরা তাকে তিন দফা পিটিয়ে এক থানা থেকে আরেক থানা টানা হেঁচড়া করে অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ঘোষণা করেন। 

তিনি আরো জানান, আমার ভাই ২০১৪ সালে পঙ্গুত্ব বরণ করারা পর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো না। । আমি পরিবারের ৪ জন সদস্য নিয়ে অত্যন্ত আতংকের মধ্যে আছি। তবে আল্লাহর কাছে বিচার দাবী করছি। তিনি আরো বলেন আমার অপরাধ সাবেক প্রধান মন্ত্রীর দেয়া চাকুরী করা। আগে জানতে পারলে এ চাকুরী করতে দিতাম না।এ চাকুরীটাই আমার ভাইয়ের কাল হয়ে দাঁড়াল। ছেলের হত্যার বিচার চান মাসুদের মা। 

মাসুদের মা বিধাব তাসেনুর বেগম জানান, তার ছেলে ১৪ সাল থেকে পঙ্গু,বরণ করে আমার ছেলে। বরং আমার ছেলেকে তিন দফা পিটিয়ে মৃত প্রায় মানুষকে টেনে হেঁচড়ে এক থানা থেকে অন্য থানা নিয়ে গেছে । আমি চিন্তা করতেই পারছিনা যে মানুষ এত নিষ্ঠুর হতে পারে।আল্লাহ যেন এর বিচার করে। আমি ছেলের নির্মম হত্যার বিচার চাই। বিচার পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। 

তিনি বলেন, তার সংসার চালাতআব্দুল্লাহ আল মাসুদই। এখন সংসার কিভাবে চলবে। ১০ টাকা হলেও মাসুদই দিয়ে সংসারটা চালাত, এখন কে আমার সংসারটা চালাবে। বড় ছেলে আয়াতুল্লাহ বেহশতীও বেকার। ফুটফুটে নাতনি হয়েছিলো একটা সু-সংবাদ পাওয়ার পর পরই এত নির্মম, মানুষের শরিরে কি একটুকু রক্ত-মাংস নাই। এলাকার নির্মম হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করেন এবং অসহায় পরিবারের জন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ পঙ্গুত্ব বরণের পর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। 

আরবি/জেডআর

Link copied!