ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
জীবন যুদ্ধে পাহাড়ের বাঙালি নারীরা

জঙ্গল থেকে কাঁঠ কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন-জীবিকা

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া থেকে ফিরে এম.কামাল উদ্দিন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম

জঙ্গল থেকে কাঁঠ কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন-জীবিকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জীবন যুদ্ধে পাহাড়ের বাঙালি নারীরা পাহাড় ও জংগল থেকে কাঁঠ কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়ার নারীরা পেটের ক্ষুধায় ঘর ছেড়ে একটি দা হাতে নিয়ে পাহাড় ও জঙ্গলে লাকড়ি কুড়াতে ছুটে বেড়ায় এই পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে। এই নারীরা এক মুষ্ঠি অন্ন্যের আশায় সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে লাকড়ি সংগ্রহের জন্য। ওই লাকড়ি কুঁড়িয়ে সেগুলো আটি বেঁধে মাথায় বহন করে বাজারে নিয়ে যায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। ওই লাকড়ি বিক্রি করে চাল ডাল ক্রয় করে নিয়ে যায় ছেলে মেয়ে ও বৃদ্ধা মা বাবার জন্য।

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বান্দরবান-রাজস্থলী সড়ক সংলগ্ন এলাকায় তিন নারীকে দেখা গেছে, তারা পাহাড় ও জংগল থেকে লাকড়ি কুঁড়িয়ে মাথায় বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় কথা বলি তাদের সাথে। তারা হলেন- ছদ্মনাম তারাবানু, সুফিয়া ও রেহেনা বেগম। মাথায় লাকড়ি নিয়ে তেমন কথা বলতে পারছে না তারা। তাদের গায়ের ঘাম ও হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম দেখে আমি নিজেও শিউড়ে ওঠি। তেমন কোন প্রশ্ন করা হয়নি। শুধু বলেছিলাম এত পরিশ্রম করছেন কেন? উত্তরে তিন নারী জানান তাদের সংসারে পরিশ্রম বা আয় উপার্জন করার কেউ নেই তাদের পরিবারে।

তিন নারী বলেন, জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুঁড়িয়ে এনে সে লাকড়ি বিক্রি করে চলে আমাদের জীবন জীবিকা। আমাদের একমাত্র অর্থকারী উপার্জন হলো এই লাকড়ি কুড়ে এনে বিক্রি করা। আমাদের আর কোন কর্ম না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে পেটের দায়ে কঠোর পরিশ্রম করি আমরা। আমাদের অর্থ উপার্জনকারী আর অন্য কেউ নেই যে,আমরা পাহাড়ে না গেছে আমাদের সংসার চলবে। শুনেছি পাহাড়ে অনেক নারীর উন্নয়নে অনেকগুলো দেশি বিদেশী সংস্থা রয়েছে ওই সব সংগঠনগুলোর দেখা আমরা পাইনি। পাহাড়ে শুধু একশ্রেণির নারীদের উন্নয়ন করতে দেখা গেছে। সে উন্নয়নের আওতায় মনে হয় আমরা পড়িনি। তারা বলছেন যদি স্বাবলম্ভী হতে সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে তারা এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম থেকে পরিত্রাণ পাবে তারা।

উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী ও অধিকার কর্মী, প্রধান নির্বাহী ত্রিমাত্রিক এবং জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, উন্নয়ন হল একটি প্রক্রিয়া যা সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং প্রাকৃতিক দিকে ইতিবাচক উন্নতি এবং প্রগতি নিশ্চিত করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের হার গুণগত ও পরিমাণ গত উভয় দিক দিয়ে খুবই কম। সামাজিক প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপটের কারণে এক ধরনের নেতিবাচক মাইন্ডসেট যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে সুযোগের অপর্যাপ্ততা এবং আর্থ-সামাজিক বন্টনের অসমতা।

আরবি/জেডআর

Link copied!