মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন দীর্ঘদিন যাবত অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গুরুত্বপুর্ণ এ ষ্টেশনটি বিগত সকল সরকারের আমলে এমপি-মন্ত্রীদের উন্নয়নের আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।বাস্তবে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিগন্যাল কেবিন ও প্ল্যাটফর্মের সামান্য কাজ ছাড়া দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন চোঁখে পড়েনি।
জানা যায়, ১৮৯২ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানী এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটার গেজ লাইন এবং ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়। এসময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের ষ্টেশন হিসেবে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন তৈরি করা হয়। এছাড়া ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শমশেরনগরে দিলজান্দ নামে একটি বিমানবন্দর স্থাপন করে এ রেলওয়ে ষ্টেশনের সাথে সংযোগ প্রদান করেন।
স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, ১৯৫৭ সালে ইরানের রাজা শাহেন শাহ পাহলভি ঢাকা থেকে রেলপথে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশনে এসে সড়ক পথে লংলার পৃথিমপাশা নবাব বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখন উনার সম্মানে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় শাহ তোরণ নামে একটি স্থায়ী পাকা (গেইট) তোরণ নির্মাণ করা হয়। যাহা কালের সাক্ষী হিসেবে আজও দাড়িঁয়ে আছে।
এলাকাবাসী জানান, রেলওয়ের রাজস্ব আয়েও সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন ব্যবহার করে সিলেট-ঢাকা-চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এছাড়া দেশের অন্যতম প্রশিক্ষণ বিমানঘাঁটি ও শমশেরনগরে রয়েছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চা-বাগান ছাড়াও পর্যটন এলাকা হিসাবে এ অঞ্চলটির সুনাম আছে। শমশেরনগর হয়ে চাতলাপুর স্থল ও শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য ও ভিসাধারীরাও যাতায়াত করে থাকেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ষ্টেশন ভবনের দেয়ালের বিভিন্ন অংশ ফেটে গেছে। সংস্কারের অভাবে দেয়াল জুড়ে শেওলা জমে আছে। যাত্রীদের বসার জন্য কোনো স্থান নেই। বৃষ্টি হলে প্ল্যাটফর্মের ছাদ থেকেও পানি পড়ে। এছাড়া রয়েছে মাত্র একটি শৌচাগার যাহা ব্যবহারের অনুপযোগী। জায়গা স্বল্পতায় কারণে ষ্টেশন মাষ্টারের কক্ষে বসে কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ অভিযোগ করে বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই টিনশেডের ঘরেই চলছে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশনের কার্যক্রম। এই ষ্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ কম। এছাড়া ষ্টেশনের যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। দ্রুত শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার মো. জামাল হোসেন বলেন,এ রেলওয়ে ষ্টেশনে প্রতিদিন ঢাকা-সিলেট পথে আন্তঃনগর কালনি,উপবন ও সুরমা মেইল এবং চট্রগ্রাম-সিলেট পথে আন্তঃনগর পাহাড়িকা, উদয়ন ট্রেন চলাচল করে। যাত্রী ও রাজস্ব আয়ে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনে শমশেরনগর রেলওয়ে ষ্টেশন খুবই গুরুত্বপুর্ণ। ষ্টেশনটির উন্নয়নে একটি প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কোন সমস্যা থাকবে না।
এলাকাবাসী সহ সচেতন মহলের দাবী, বর্তমান সরকারের সু-দৃষ্টি’ই পারবে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গুরুত্বপুর্ণ এ রেলওয়ে ষ্টেশনটির দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়ে, পুরাতন চেহারা বদলে দিতে।
আপনার মতামত লিখুন :