ঢাকা বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি

আকাশে মেঘ জমলেই কপালে চিন্তার ভাঁজ!

মোজাম্মেল হক আলম, লাকসাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম

আকাশে মেঘ জমলেই  কপালে চিন্তার ভাঁজ!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টিই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। তবে অন্য উপজেলাগুলোর তুলনায় মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম বানের পানি কম হারে নামছে। এসব এলাকায় এখনো পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ। মনোহরগঞ্জের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ডুবে আছে। ফলে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের এই দুইটি  উপজেলায় দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিন দেখা যায়, বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালগুলো দখল করেছেন। এ ছাড়া ছোট-বড় খালগুলোও স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে ভরাট করেছেন। অনেক স্থানে খালের মধ্যে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে রাস্তা। এসব কারণে এই দুই  উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা কমেনি।

টানা ৩৫ দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলা গ্রামের রিক্সা চালক আকু মিয়া (৪০)। মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখেন এখনো উঠানের ওপরে পানি। বসতঘর থেকেও নামেনি পানি। দুই দিন আগে পানি যা দেখেছেন, আজও তেমন দেখেছেন। পানি যেন কমছেই না। এদিকে গত কয়েক দিন থেকে স্কুল খুলে দিয়েছে, তাই দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেছে। সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন, জানেন না তিনি। শুধু আকু মিয়া নন, কুমিল্লার বন্যাকবলিত লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার পরিবারের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, কবে বন্যার পানি কমবে। কবে তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বন্যাকবলিত ১৪ উপজেলায় এখনো প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যা গত সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ২২ হাজারের বেশি। বন্যার পানি না কমার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারছেন না। জেলার লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১৭২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৫ হাজার ৬৬৯ জন মানুষ রয়েছে। এই সংখ্যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ হাজারের বেশি। গত দুই দিনে বন্যার পানি তেমন একটা কমেনি। দুই উপজেলাতেই পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে।

অপরদিকে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি, বৃষ্টিই যেন থামছে না, কুমিল্লার লাকসাম-মনোহরগঞ্জে, আকাশ কালো দেখলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন এই দুই উপজেলাবাসী।

সার্বিকভাবে কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। অনেক স্থান দখল ও ভরাটের কারণে পানি নামার পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। অবাধে নদী ও খাল দখল এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। এ-দু এলাকায় প্রায় ৫০শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্ধি। যেগুলোতে এখনো পাঠদানের অনুপযোগী।

লাকসাম উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুর রহিম । তিনি বলেন, এই জীবনে কখনো এত বড় বন্যা আর এত পানি দেহি নাই। আমার বাপের কাছেও শুনি নাই!৩৫ থেকে ৩৭ দিন ধরে আবদুর রহিমের এলাকার অনেক বাড়িঘরের বিভিন্ন অংশ পানির নিচে তলিয়ে আছে। চারদিকে তাকালে দেখা যায় মানুষের দুর্ভোগ, হাহাকার আর কষ্টের চিত্র। ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে যেভাবে পানি কমছে, তাতে এই দুর্ভোগ সহজে শেষ হবে না বলে মনে করেন এই বৃদ্ধ।

মুদাফরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর বাড়িতে এখনো হাঁটুর ওপরে বন্যার পানি। বসতঘরের ভেতরও হাঁটুর কাছাকাছি পানি। গত দুই দিনে একটুও পানি কমেনি।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথের পেটুয়া এলাকার  বাসিন্দা অধ্যাপক সাইদুর রহমান  বলেন, তাঁদের গ্রামের ভেতরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এখনো বন্যার পানি। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রথম দিকে পানি কমার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু গত দুই দিন পানি একটুও কমেনি। এ পরিস্থিতিতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, ‘নদী-খাল দখল ও বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে পানি নামতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, এটা সত্য কথা। তবে আমরা প্রতিটি খাল ও নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাঁধ অপসারণ করে পানির প্রভাব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি নেই, পরিস্থিতি এমন থাকলে দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি।’

লাকসাম উপজেলার ইউএনও আবদুল হাই সিদ্দিকী  বলেন, এ উপজেলায় বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। নদী ও খালের যেসব স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে, সেসব স্থানে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, সার্বিকভাবে কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। অনেক স্থান দখল ও ভরাটের কারণে পানি নামার পথ সংকুচিত হয়ে গেছে। অবাধে নদী ও খাল দখল এবং ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!