ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫
ফোর লেন সড়ক নিয়ে ‘সঙ্কট’

ভারতীয় তিন প্রকৌশলী আসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম

ভারতীয় তিন প্রকৌশলী আসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবি

ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্মাণাধীন ফোর লেন সড়কের বন্ধ থাকা কাজ ফের শুরু হতে যাচ্ছে। এ কারণে ভারতীয় ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের তিনজন প্রকৌশলী আসবে আগামী ২১ অক্টোবর। তাঁরা পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখার পর সঙ্কটে থাকা এই মহাসড়কের কাজ শুরু হতে পারে।

এজন্য নির্মাণাধীন সড়কটিতে যুক্ত ভারতীয়দের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির ঢাকাস্থ হাইকমিশন।

ভারতীয় তিন প্রকৌশলীর আসার বিষয়টি সোমবার (১৪ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও সড়কের দূরাবস্থার বিষয়ে আলোচনা হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হকের পরিদর্শন ও ‘এক সপ্তাহের মধ্যে’ কাজ শুরুর আশ্বাসের দুই সপ্তাহ পার হাওয়ার পর এই আশ্বাস পাওয়া গেল।

জেলা প্রশাসক ইনডিপেনডেন্ট অনলাইনকে বলেন, আগামী ১৭ অক্টোবর ওই তিন প্রকৌশলী ঢাকায় পৌঁছবেন। এরপর ২১ তারিখে আসবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আশা করছি এ মাসের শেষে কাজ শুরু হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অন্যতম কারণ ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের চার কিলোমিটার সড়ক। নির্মাণাধীন সড়কটির ওই অংশে অনেক বেশি ভাঙা থাকায় বাস-ট্রাকসহ সকল যানবাহনকে বাধ্যতামূলক ধীরে চলাচল করতে হয়। এই সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে পুনিয়াউট মোড় থেকে পৈরতলা রেলক্রসিং পর্যন্ত এলার্মিং ছিলে। এখন অবশ্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তার এই বক্তব্যের সূত্রে জেলা প্রশাসক আশার বাণী শুনান। তারা জানান,  ভারতীয় ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসছে। প্রথম পর্যায়ে ১৭ অক্টোবর তিনজন প্রকৌশলী ঢাকায় আসবে। ২১ তারিখ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে তাঁরা। ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব সালোনি সাহাই তাঁকে তিন প্রকৌশলীর আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসনকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব কাজে যাতে বিন্দুমাত্র বাঁধার সৃষ্টি না হয়।

এরআগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সড়কটি পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন। সচিব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে– তোমরা আস, কাজ কর। আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব কাজ কর। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে ভারতীয় হাই কমিশনার নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কথা বলেছেন। তাছাড়া বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে রয়েছে।

সচিবের সড়ক পরিদর্শনের আগে জনদূর্ভোগ লাগবে এই সড়ক মেরামতে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের চিঠি পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়, সড়কটির বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনে। এরপরই গত ১৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে নির্দেশনা দেয়।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ২টি প্যাকেজে ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ক রয়েছে।  প্রকল্পের এই অংশের রাস্তা ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এ দুটি প্যাকেজভুক্ত সড়কের বেশ কিছু অংশে এখনও নতুন রাস্তা নির্মাণ শেষ না হওয়ায় জনভোগান্তি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রসঙ্গত, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অবস্থিত বর্ণিত কাজের ঠিকাদারী  প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফেরত চলে গেছে। ফলে বর্তমানে এ রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। উল্লেখিত অংশগুলোতে দ্রুত মেরামত কাজ করা না হলে হতাহতসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জেলা প্রশাসন থেকে সরকারের ওপর মহলে বারবার চিঠি দিয়ে সড়কের ভয়ংকর অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়।

ফোর লেন সড়ক প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিনশত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত ছিল। সরকার পতনের পর গত ১০ আগস্ট তাঁরা নিজের দেশে চলে যায়। এরপর গত দুই মাসে এই সড়ক জেলার মানুষের কাছে মহাসংকটের নাম হয়ে উঠে। যা এখন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের বেগতিক অবস্থার মুখে দুর্গাপূজার আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পরামর্শ করে ইট ফেলে সড়কের কিছু অংশ মেরামত করার পদক্ষেপ নেন।

বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ এই বিভাগের অন্যান্য জেলায় প্রতিদিন শতশত যাত্রীবাহি বাস ও অন্যান্য পরিবহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে।

আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ভারতীয় ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ৩০ জুন। শুরু থেকে নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। তিনটি প্যাকেজে চলা এই কাজের মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ ভাগ। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ ভাগ। আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে।

বর্তমানে আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে তন্তর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুউব ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ ও সরাইল গোলচত্বর, ঘাটুরা মেডিকেল কলেজ, বিরাশার, মধ্যপাড়া, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা, উজানিসার ইত্যাদি অংশে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, পিকআপ উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, সড়কের যে ৪ কিলোমিটার অংশ বিপদজ্জনক তা সাময়িক মেরামতের চিন্তা করা হয়েছিলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের মাধ্যমে এই কাজ করানোর জন্যে ইস্টিমেটসহ প্রধান প্রক্যেশলীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ১৫ কোটি টাকার এই কাজের স্থায়ীত্ব হতো মাস ছয়েক। যা পরে আর হয়নি।

আরবি/ এইচএম

Link copied!