আজ বাঙালির ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব। এই দিনকে ঘিরে সারাদেশের ন্যায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকা সহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে কৃষকের ঘরে-ঘরে এ উৎসব উৎযাপিত হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পঞ্জিকা ও বাংলা সালের ১লা অগ্রহায়ণে হয় আনন্দঘন নবান্ন উৎসব। নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব পালন করার জন্য কৃষকদের আনন্দের যেন কোন কমতি নেই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আচার-অনুষ্ঠান কৃষির ঐতিহ্য ও জনমানুষের সংস্কৃতিকে ফসল কেন্দ্রিক সবার ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, নবান্ন উৎসব সেগুলোর অন্যতম।
সনাতনী বিশ্বাস অনুযায়ী, নবান্ন উৎসবের সঙ্গে পূজা আনুষ্ঠানিকতাও যোগ হয়। হিন্দুরা নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করেন। পার্বণ বিধি অনুযায়ী শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়। কে চায় অমন পাপ করতে! তাই নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে।
আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা বিশেষ লৌকিক প্রথা।
নবান্ন উৎসবে কাকবলী, লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ হয়ে গেলে সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন। এর আগে কেউ কিছু মুখে নেন না। এ ছাড়াও নবান্ন উৎসবের দিন গৃহস্থ বাড়িতে চলে নানা পদ রান্না । সকল নতুন শাক, সবজি , ভাজি, মাছসহ ১০ থেকে ১৫ পদের তরকারি রান্না করা হয় বাঙালির বাড়ি বাড়ি। সকালে পালন করেন বাসি নবান্ন।
জীবন ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জয়গানে হাজার হাজার বছর আগে কৃষি প্রথা যখন চালু হয়েছিল, তখন থেকেই নবান্ন উৎসব উৎযাপন করা হয়।হেমন্তকে ফসলের ঋতু বলা হয়। এক সময় মরা কার্তিকে এসে কৃষকের গোলা শূন্য হতো ।খাবারের অভাব দেখা দিত । সকলে তখন তাকিয়ে থাকতো অগ্রহায়ণের দিকে। তবে যত দিন গেছে ততই বদলে গেছে হিসাব-নিকাশ। কার্তিক আর আগের মতো নেই। কার্তিক মাসেও পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ধান। শস্যের বহুমুখীকরণের ফলে মোটামুটি এখন সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন কৃষক।।
লোককবির ভাষায়- ‘আইলো অঘ্রাণ খুশিতে নাচে প্রাণ/চাষি কাঁচিতে দিলো শান/কাঁচি হাতে কচ কচা কচ কাটে চাষি পাকা ধান...। ঠিক এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে আগাম আমন ধান কাটার উৎসব। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ফসল কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে ।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫`শ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৯ টন চাল। এবছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে ১২ হাজার ৬শ` হেক্টর চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩ দশমিক ১ টন চাল উৎপাদন হচ্ছে, যা গত বছরগুলোর তুলনায় বেস বেশি।
সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তি বলেন, এরই ধারাবিকতায় অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মেতে উঠবে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ। নিজের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবে নতুন প্রজন্ম।
আপনার মতামত লিখুন :