আজ ২৪ শে নভেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাক হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী শুরু করে বাঙ্গালী জাতীর উপর গণহত্যা ও নির্মম অত্যাচার। শুরু হলো দেশ রক্ষায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিরোধ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৭১ এর এপ্রিল মাসে কাপাসিয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রবেশ করে কাপাসিয়া বাজার ও সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়। পাক বাহিনী বর্তমান কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ক্যাম্প স্থাপন করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাপাসিয়ায় প্রবেশের পর থেকেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ করতে চাইলেও সফল হতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধারা কিছু অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে কাপাসিয়ায় কয়েকটি এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তখনকার সময়ে বিএফ, বিএলএফ এবং এফএফ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। পাক সেনারা তরগাঁও গ্রামে লুটপাট ও অ:গ্নিসংযোগ করে কাপাসিয়া ফিরে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা শীতলক্ষ্যা নদীতে আক্রমণ করলে পাক বাহিনী বহন করা নৌকা ডুবে কিছু পাক সেনা মারা যায়। তরগাঁও খন্দকার বাড়ির সামনে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে সাজ্জাদ শহীদ হন এ সময় পাক সেনারা গিয়াসকে ধরে নিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে এই দুইজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ নিয়ে পাক সেনারা উল্লাস করে। ১৮ নভেম্বর ভারতে ট্রেনিং প্রাপ্ত এবং কাপাসিয়ার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপন করা পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিলে এই সংবাদ রাজাকারদের মাধ্যমে সেনা ক্যাম্পে পৌঁছে যায়। তখন থেকেই হানাদার বাহিনী ক্যাম্প ছাড়তে শুরু করে। ২৪ নভেম্বর পুরো কাপাসিয়া হানাদার মুক্ত হয়।
সাবেক এমপি এবং গাজীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়েদ উল্লাহ বলেন, কাপাসিয়া উপজেলায় পাক হানাদারদের আলাদা নজর ছিল। কারণ এখানে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি ছিল। শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরে অনেকগুলো যুদ্ধ হয়েছে। পাক সেনারা সাঁতার না জানায় পানিকে ভয় পেত, আর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁতার জানায় তারা পানিতেই আক্রমণ করতো।
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা বলেন, পাক বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধের স্থানগুলো চিহ্নিত করে মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস লিখে ফলক তৈরি করা দরকার। যাতে করে নতুন প্রজন্ম স্থানটি দেখে জানতে পারবে মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস।
কাপাসিয়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ গনি বলেন, তরগাঁও তফি মুক্তারের বাড়ির নিকট সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনী হেভি অস্ত্র ব্যবহার করে সে সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে যায়। পরবর্তীতে আবার, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুতি নিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে আরেকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এ সময় দুইজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম বলেন, কাপাসিয়া হানাদার মুক্ত দিবস কবে তা আমার জানা নেই আর আমি কাপাসিয়ায় নতুন যোগদান করেছি। আপনার মাধ্যমে যেহেতু জেনেছি আগামী বছর বীর মুুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে কাপাসিয়া হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :