আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি ও ৫ নভেম্বর খাগড়াছড়ি থেকে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও বান্দরবানে এখনো বহাল আছে। তবে বান্দরবানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খরচ পোষাতে না পেরে বান্দরবানে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন হোটেল-রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৩০ অক্টোবর) হোটেল-রিসোর্ট-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ তিনটি জেলায় ‘পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত’ করার কথা বলা হয়। যদিও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন নিরুৎসাহিত নয় বরং নিষেধাজ্ঞা ছিল। কি বিষয়ে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে স্পষ্ট কিছু জানানো না হলেও ধারণা করা হয় পাহাড়ে ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রশাসন থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বান্দরবানে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) পর্যটন ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসককে একটি লিখিত আবেদনও করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, সেবার মাধ্যমে সামান্য লাভের আশায় জেলা জুড়ে কয়েক শত লোক পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করেছে। এসব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত। এদের সাথে গণপরিবহন, চাঁদের গাড়ি, বার্মিজ ষ্টোর, ইঞ্জিন চালিত বোট, থ্রি হুইলার, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন খাতে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে অন্তত ২০ হাজারেরও অধিক জনগণ। যা সম্পূর্ণ পর্যটক নির্ভর। তবে ২০১৯ সাল থেকে করোনা ভাইরাস, বান্দরবানে ভয়াবহ বন্যা, সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন এর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে লাগাতার ভাবে বান্দরবান এর পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
বিগত কয়েকমাস পূর্বে সীমিত পরিসরে কিছু পর্যটন স্পট পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য খুলে দিলেও দেশেরবিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কাঙ্খিত পর্যটক, ভ্রমনে আসতে পারেননি। ফলে এখনকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোতে ব্যাপক ধ্বস নামে।সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের বান্দরবান ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন। যার কারনে ব্যয়ভার মেটাতে না পেরে কর্মী ছাঁটায়সহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে অনেক বিনিয়োগকারী।
রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পারিপার্শ্বিক কারণে পর্যটকের উপস্থিতি আশানুরুপ নাই। এ কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। খরচ পোষাতে না পারায় ইতোমধ্যে বেয়াই বাড়ি, গার্ডেন সিটি, কলাপাতাসহ জেলা সদরের প্রায় ২৫ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ৩১ তারিখের পর চলতি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে আরও অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
হোটেল ডি’মোরের ম্যানেজার হ্যাপী মারমা জানান, তিন তারকামানের তাদের হোটেলটিতে দৈনিক অন্তত ৫০ হাজার টাকা খরচ আছে। পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় তাদের হোটেলটি চলতি মাসের গত ৫ তারিখ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে ক্রমান্বয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বান্দরবান জেলার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে চলমান খরচ বহন করতে না পারায় অনেক হোটেলের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল ডিমোর, লাভা তং, হোটেল হিলবার্ডসহ আরও কয়েকটি আবাসিক হোটেল।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে অন্যান্য হোটেলগুলো বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে কোনো রকম বাঁচবে হোটেল-রিসোর্ট-রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পর্যটন শিল্প নিয়ে আমরা তো আশাবাদী। পার্বত্য উপদেস্টার সাথে কথা হয়েছে। আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) এ বিষয়ে সভা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :