চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় সংরক্ষিত ও সমাজিক বনের হাজার হাজার মণ গাছ কেটে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মূল্যবান গোল কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে।
সুত্র জানা যায়, প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানের সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়নের কাঠ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৫-৩০টি জিপ গাড়ি ও ট্রাকের মাধ্যমে পাচার করছে বেশ কয়েকটি চক্র।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, এই উপজেলায় বন বিভাগের ৩২০ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে সামাজিক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানও রয়েছে। এসব বনাঞ্চল থেকে অবাধে গাছ কেটে নিচ্ছেন একশ্রেণির কাঠ ব্যবসায়ী। এমনকি বাদ যাচ্ছে না সংরক্ষিত বনের গাছও। মূলত ইটভাটায় জ্বালানির জোগান দিতেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী এসব বনাঞ্চল ধ্বংস করছেন।
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের মতে, উপজেলার অর্ধশতাধিক ইটভাটা ও ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ সরবরাহ করেন তারা। উপজেলার ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং,বাগানবাজার, দাঁতমারা, শান্তিরহাট, হেঁয়াকো, নারায়ণহাট, মির্জারহাট, কাঞ্চননগর, শোভনছড়ি, হাজারীখীল ও সর্তা থেকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি কাঠ পাচার হয়। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার কাজিরহাট-নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি সংযোগ সড়কের বিবিরহাট-নাজিরহাট (পেলাগাজীর দীঘি) ও রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কগুলো কাঠ পাচারের নিরাপদ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, তারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঠ কিনে তা সুবিধাজনক সময়ে রাস্তার ধারে এনে জমা করেন। সেখান থেকে ট্রাক ও জিপে করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার ভূজপুর গিয়ে দেখা যায়,রাস্তার পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে জ্বালানি কাঠ। একাধিক জিপগাড়িতে শ্রমিক দিয়ে ওঠানো হচ্ছিল সেসব কাঠ।
জানে আলম নামের এক শ্রমিক জানান, সামাজিক বনায়ন এবং এলাকার বিভিন্ন লোকের বাগান থেকে সংগ্রহ করা এসব কাঠ ইটভাটায় সরবরাহ করা হবে। ভূজপুর ও নারায়নহাট থেকে প্রতিদিন চার-পাঁচটি জ্বালানি কাঠ বোঝাই ট্রাক চট্টগ্রাম ও ফেনীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া উপজেলার ইটভাটাগুলোতে দৈনিক কমপক্ষে এক হাজার মণ জ্বালানি কাঠ সরবরাহ করা হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, কাঠ পাচারের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই চলছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
তিনি বলেন, বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যে কোনো ধরনের গাছ কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধিতা ও আমাদের জনবল সংকটের কারণে এসব বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। তারপরও সম্প্রতি আমরা একাধিক গাছের গাড়ি আটক করেছি এবং মামলাও হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা বৃক্ষনিধন রোধে তৎপর রয়েছি।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের গাছ কেটে পাচার হচ্ছে এটি সত্য। সম্প্রতি বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তারা চাইলে গাছ পাচার রোধে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :