বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক এক রকম বৈশিষ্ট্য। বাংলার প্রকৃতির ঋতুবৈচিত্র্যে এখন চলছে শীতকাল। দিনে মিষ্টি রোদ, ভোরে পাতায় শিশির বিন্দু কুয়াশার চাদরে ডেকে যায় সারাদেশে। একই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য ভোরে ব্যস্ত সময় পার করেন রস সংগ্রহকারীরা। তারা আশ্বিনে খেজুর গাছ চাঁছতে (স্থানীয় ভাষা- চিলতে) শুরু করেন। কাজ শেষে গাছ শুকানো নল লাগানো রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করা হয়। এখন মাঘ মাস আসার সাথে সাথে খেজুর গাছ থেকে বেশি রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
খেজুর গাছ একবার চাঁছলে তিন-চার মাস রস সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে একদিন রস সংগ্রহ বন্ধ করে গাছ শুকাতে হয়। শুকনো গাছের রস সুমিষ্ট হয়। শীত যত বাড়ে খেজুরের ত রস বেশি সংগ্রহ করা যায়। খেজুরের রস সংগ্রহ করে রস থেকে পাটালি গুড় তৈরি শুরু হয়ে চলবে মাঘ মাস জুড়ে।
জেলার কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে গাছিরা খেজুরের রস গুলো সংগ্রহ করতে থাকেন। ঝুঁকি নিয়ে মাজায় রাবারের বা পাটের বেল্ট ব্যবহার করতে হয় রস সংগ্রহ করা গাছিদের।
দিনভর রোদ্রে খেজুর গাছ শুকানোর পর বিকেলে গাছের কিছু অংশ কেটে নিয়ে তাতে কেউ প্লাস্টিকের, কেউ মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধছেন। এখনকার রস ভালো মিষ্টি হয়ে থাকে। কেউবা অল্প কাঁচা রস সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কেউ কেউ আবার ঝোলা গুড় বানানোর চেষ্টা করছেন।
গ্রামাঞ্চলে পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, বাড়ির আঙিনায় খেজুরের গাছ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য ছিল। ঝোপঝাড়ে, ক্ষেতের আইলে, গ্রামের মেঠোপথের দুই ধারে অসংখ্য খেজুরের গাছ কোন পরিচর্যা ছাড়া বড় হতো। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হতো সুস্বাদু খেজুরের পাটালী গুড়। অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামাঞ্চলে গাছি পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। একদিকে নতুন ধানের চাল,আর খেজুরের রসে তৈরি হতো নানা প্রকার পিঠা-পায়েস। বাড়িতে বাড়িতে নবান্নের উৎসব দেখা যেতো। যা এখন বিলুপ্ত। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য।
জনপদের সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে পরিবেশবান্ধব এ খেজুরের গাছ ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে বেশি ব্যবহার করার কারণে খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। কমছে শুধুই খেজুর গাছের সংখ্যা। সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন-যাপনের হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি।
কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে নোয়াখালীর সেই খেজুরের গাছ। এখন এই জেলার অনেক গ্রাম ঘুরে কোথাও খেজুরের গাছ চোখে পড়ে না। প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলার কিছু অংশে দেখা য়ায় এই খেজুর গাছ। সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :