ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গাংনীতে বাড়ছে যক্ষ্মা রোগী

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

গাংনীতে বাড়ছে যক্ষ্মা রোগী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও মেহেরপুরের গাংনীতে ক্রমেই বাড়ছে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা। সাধারণ যক্ষ্মার পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ যক্ষ্মা হিসেবে খ্যাত এমডিআর টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। এরই মধ্যে ওই সব রোগীর বাড়িকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনই উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোগ নির্ণয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, যক্ষ্মা ভালো করতে সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়মিত ওষুধ সেবন ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালে গাংনীতে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪০৮। আর চলতি বছরের গত আট মাসে এ উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০০ জন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা আটজন। তবে এমআরটিবি শনাক্ত করা হয় ১০ জনকে। তারা হচ্ছেন কাজিপুর ইউনিয়নের হাড়াভাঙ্গা গ্রামের বুলুয়ারা (৪৫), বেতবাড়িয়ার রওশনারা (৯০), লিয়াকত আলী (৬৫), তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের রামদেবপুরের কাশেম আলী (৭৮), রামনগরের নাজির মণ্ডল (৬০), পলাশী পাড়ার তহমিনা (৪৫), কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়ার বজলুর রহমান (৬০) ও রাইপুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া গ্রামের জহুরা খাতুন (৬৫)। এসব আক্রান্ত রোগী শুধু নয়, গোটা পরিবারকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জন সুস্থ হয়েছেন। মাত্র একজনের চিকিৎসা চলমান।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএলসিএ জাহিদুল ইসলাম জানান, যক্ষ্মায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমাতে সময়মতো রোগ শনাক্তের বিকল্প নেই। তাই পরিবারের একজনের যক্ষ্মা হলে সবার পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তারা। তবে যক্ষ্মা হলে মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চায় না। এর মূলে রয়েছে লোকলজ্জা, রোগের ব্যাপারে অবহেলা ও সচেতনতার অভাবের মতো বিষয়। তা ছাড়া কর্মজীবীরা কাজ বাদ দিয়ে সহজে রোগনির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। তার পর কেউ আসতে চান না পরীক্ষার জন্য।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. এমকে রেজা জানান, যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা পরিবারের সদস্যরা, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের অন্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, এইচআইভি, কিডনির জটিলতা প্রভৃতি রয়েছেÑতারা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। আবার নতুন করে সুপ্ত যক্ষ্মার জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যক্ষ্মা প্রধানত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে, তবে এটি কিডনি, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন টিবি বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সহযোগী সংস্থা ব্র্যাকের মেহেরপুর জেলা সমন্বয়কারী মনিরুল ইসলাম জানান, যক্ষ্মার ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী। এই রোগটিতে মূলত ফুসফুস আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা রোগীদের সাধারণ যেমন কিছু উপসর্গ রয়েছে। তেমন এই ভাইরাস মূলত কাশি-হাঁচি থেকে বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী জানান, বাংলাদেশে সর্বত্র বিনা মূল্যে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন। কারণ যক্ষ্মা হলে শরীরে ক্ষয় বেশি হয়, মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তাই দ্রুত শনাক্তের পর চিকিৎসা নেয়া অনেক বেশি জরুরি। যক্ষ্মার চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত।

আরবি/জেডআর

Link copied!