গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে নববর্ষের শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। ইটের আঘাতে উভয়পক্ষের সমর্থকদের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। মুকসুদপুরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে হাবিব মোল্লাকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া মিজানুর রহমান, নাজমুল, হাফিজুর রহমান, ওসমান শেখ, মশিউর, আসলাম, আমানত, আরমান হোসাইন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুরে মুকসুদপুর কাঠপট্টি এলাকার একটি চায়ের দোকানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. জয়নুল আবেদীন মেজবাহর নববর্ষের শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার টাঙাতে যান সমর্থক জিম মোল্যা। সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিমের নববর্ষের শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার সরিয়ে জীম মেজবাহর ক্যালেন্ডার টাঙাতে চাইলে সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থকরা বাধা দেয়।
জীমের বাড়ির সামনে সন্ধ্যার দিকে সেলিমুজ্জামানের ব্যানার টাঙাতে গেলে জীম বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিমুজ্জামানের সমর্থকরা জীমের বাবা হাবিব মোল্লাকে বেধড়ক মারপিট করে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘জীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ভাঙচুর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয়পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এরপর সংঘর্ষ থেমে থেমে চলতে থাকে। আতঙ্কে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। ভাঙচুর করা হয় তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাত ৯টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন।
সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থক মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাজু বলেন, খিপু মিয়ার নির্দেশে মেজবাহর সমর্থকরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সেলিমুজ্জামান সেলিমের ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। আমরা বাধা দিতে গেলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি করতে চাই।
জয়নুল আবেদীন মেজবাহর সমর্থক ও মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন খিপু মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া দাবি করেছেন, জীম মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তিনি উপজেলা সদরে মেজবাহর বেশ কিছু ব্যানার টানান। সেখানে জীমের ছবি রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এসব ব্যানার সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থকরা নামিয়ে ফেলেন। এগুলোর ছবি তুলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাতে বলি। জীম থানায় রওনা দেন। এ সময় সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থকরা জীমের বাবা হাবিবুর রহমানকে মারপিট করে। তারপর তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে আমার বাবা কোনোভাবেই জড়িত নয়। সেলিমের লোকজন মুকসুদপুরের শান্তি নষ্ট করতে চায়।
মুকসুদপুর থানার ওসি (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল জানান, মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। উভয় গ্রুপের নেতার নববর্ষের শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার ও ব্যানার টাঙানো নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মুকসুদপুর থানা পুলিশ আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :