ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বান্দরবানে বিএনপি দুই নেতা কামিয়েছে কোটি টাকা

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম

বান্দরবানে বিএনপি দুই নেতা কামিয়েছে কোটি টাকা

বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মাবুদ এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মিঠুন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বান্দরবানে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মাবুদ এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মিঠুন। বিগত সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এই বিএনপি দুই নেতা। নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য নিজ দলের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেন এই দুই নেতা। আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আঁতাত করে নামে বেনামে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আ.লীগের নেতাদের সঙ্গে স্বজনপ্রীতি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকার বেশি কাজ করেছিলেন বিএনপির এই দুই নেতা।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে-লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার সরই-কোয়ান্টম সড়ক নির্মাণ, ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার আলীকদম দৌছরি সড়ক নির্মাণ, তিন কোটি টাকায় এলজিইডি ভবন নির্মাণ। এছাড়াও এলজিইডি অর্থায়নে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে রুমা বাজারে ব্রীজ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে রোয়াংছড়ি খানসামা পাড়া ব্রীজ নির্মাণসহ জেলার সাতটি উপজেলায় আ.লীগের নেতা সাথে আতাঁত দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা কামিয়েছেন বিএনপির এই দুই নেতা।

অন্যদিকে, গত ১৫ বছর ধরে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী প্রকাশ বড়ুয়া ও আওয়ামী লীগের নেতা রাজেস্বর দাস বিপ্লবের সঙ্গে পার্টনারশিপ করে আসছিলে দীর্ঘবছর ধরে। বিএনপি নেতা আব্দুল মাবুদ নিজের দলকে বদনাম ও কুরুচীপূর্ণ বাখ্যা দিয়ে সেসব অর্থ দিয়ে জেলা শহরের হাফেজঘোনা নিজস্ব ফ্ল্যাট, বাজারে দুটি বহুতল ভবন নির্মাণসহ চট্টগ্রামে খুলেছে জুতার শোরুম। যার ফলে নিজেদের দলের নেতাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভের সৃষ্টি।

জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির মধ্যে সুকৌশলে বিভাজন তৈরি করে রেখেছেন আওয়ামীলীগের মন্ত্রীর কয়েকজন সুবিধাভোগী মুষ্টিমেয় দালাল নেতারা। সতের বছর ধরে স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতাদের রক্ষা করতে ঢালাওভাবে ৩২ জনের নামে দূর্নীতির অভিযোগ এনে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে এসব দূর্নীতি অভিযোগে স্বারকলিপি দেয়া হলেও আওয়ামীলীগের দূর্নীতিবাজদের অনেকের নাম নেই। এই দুই নেতার স্বজনপ্রীতি করায় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আ.লীগ সুবিধা নেয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতা মশিউর রহমান মিঠুন সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অস্বীকার করে বলেন, বৈধভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারী কাজ করে আসছি। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমি কোন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করি নাই বলে দাবী করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতার দূর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের নেতাদের নামের তালিকা আমি করি নাই। তালিকায় আওয়ামীলীগের অন্যান্য দূর্নীতিবাজ নেতাদের নাম কেন দেয়া হয় নাই সে বিষয়েও আমি জানিনা। আমি শুধু বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে তালিকা দিতে গিয়েছিলাম।

আরেক সুবিধা নেয়া বিএনপি নেতা আব্দুল মাবুদ সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

পার্টনারে কাজ করার বিষয়ে আওয়ামীলীগের নেতা রাজেস্বর দাস বিপ্লবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মশিউর রহমান মিঠুন আমার বন্ধু। তবে তার সাথে আমি কোন ধরনের পার্টনারে ঠিকাদারী কাজ করি নাই বলে অস্বীকার করেন তিনি।

এই বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মো: জাবেদ রেজা বলেন, ইতিমধ্যে যারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে স্বপ্রনোদিত হয়ে দূর্ণীতিবাজদের অনেককে রক্ষা করতে স্মারকলিপি দিয়েছেন এবং কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাঠ ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার মত বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেন্দ্রে তথ্য প্রমাণ পাঠানো হয়েছে বলে জানান এই নেতা।

আরবি/জেডআর

Link copied!