ইউপিডিএফ নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। তারা শান্তি চুক্তি মানে না, তারা আদিবাসী মানে না। ইউপিডিএফ হচ্ছে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন।
তারা পার্বত্য অঞ্চলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন চায় কিন্তু তারা গত ২৭ বছরেও তাদের দাবি পূরনের জন্য সরকারের কাছে যথাযথ দাবি যানায়নি। তারা পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়, ইউপিডিএফ চাঁদাবাজি দল। তাদের আমি বলতে চাই, তোমারা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন চাও এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। স্বায়ত্তশাসনের জন্য তোমারা তোমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাও আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু কারো বিরোধিতা করিও না।
পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তির ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে এমনটাই মন্তব্য করেছেন সাবেক সাংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, আমরা আজ থেকে ২৭বছর আগে কোন দল কিংবা কোন গোষ্ঠীর সাথে শান্তি চুক্তি করিনি আমারা চুক্তি করেছি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে। বাংলাদেশের মানুষ অন্যায়- অত্যাচার, নিপিড়ন থেকে মুক্তির জন্য ১৯৭১ সালে যোদ্ধা করেছে। ২০২৪ এ এসেও সরকারের অন্যায়- অত্যাচার, নির্যাতন-নিপিড়ন থেকে মুক্তির জন্য গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত হয়েছে ঠিকি কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল এখনো মুক্ত হয়নি। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পাইনি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি ২৭বছর পেরিয়ে গেলো এখনো পাহাড়ে শান্তি চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এটা একটা দুঃখজনক ব্যাপার। অনেকেই আমাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করতে চায়। আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নই আমরা পার্বত্য অঞ্চলকে আলাদা রাষ্ট্রেও পরিনত করতে চাই না, আমাদের চাওয়া দেশ বিরোধী নয় আমরা বাঙালি বিরোধী নই, আমরা দেশের অংশ বিভক্ত করতে চাই না। আমরা চাই পাহাড়ের নিপিড়ীত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাঙামাটির জিমনেসিয়াম মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী সকল ষড়ষন্ত্রের প্রতিবাদে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জনসংহতি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক উ উইন মং জলির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, সমাজসেবী সুকুমার চাকমা, মগ পার্টির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমাসহ আরও অনেকে।
এসময় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পাহাড় থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে প্রকৃত ভূমি মালিকদের প্রদান করতে হবে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলোতে কোন সরকারি আইন-শৃঙ্খলারবাহিনী বাসানো যাবে না।
পার্বত্য চুক্তি অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে যে বিশেষ শাসন কাঠামো করার কথা তা এখানো করা হয়নি। তার জন্য কোন সরকার উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। এই পর্যন্ত ৫টি সরকার ও ২টি অন্তর্বর্তীকালিন সরকার এসেছে কিন্তু কোন সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নকে আন্তরিকতার সহিত কাজ করেনি।
শান্তি চুক্তির মাধ্যমে জুম্ম জনগণ অস্ত্র জমা দিয়েছে কিন্তু প্রশিক্ষণ জমা দেয়নি। তারা প্রয়োজনে আবার লড়াই সংগ্রাম করতে বাধ্য হবে। এই অঞ্চলে পুর্নবাসন না করতে আমরা ২৪বছর সংগ্রাম করেছি। প্রয়োজনে আরও করে যাবো তবু ও তাদেরকে পুর্নবাসন করতে দিবো না। ইউপিডিএফ শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না চেয়ে পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন চায়। তাই আমরা বলবো এখনো সময় আছে অস্ত্রবাজি সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার আহবান জানান। পার্বত্য চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ কিরেছে আ.লীগ সরকার।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস`র মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ দুইযুগ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল উদ্দেশ্য। চুক্তির হাত ধরে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে নেয়া হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প। বিশেষ করে শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা আর পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। অর্থনৈতিক ভাবেও এসেছে সমৃদ্ধি।
কিন্তু শান্তিচুক্তি হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া এই চুক্তির ২৭ বছরেও শান্তি ফিরেনি পাহাড়ে। মূলত ৬টি আঞ্চলিক দলের রাজনৈতিক বিভক্তি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির কারণে সংঘাতে কাংখিত শান্তি শান্তি এখনও অধরা পাহাড়ে। এরজন্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুষছেন পাহাড়ের মানুষ। একই সাথে স্থায়ী শান্তি ফিরাতে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে দ্রুত বর্তমান সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি উঠেছে। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার ওপর ভরসা রাখতে চান তারা।
আপনার মতামত লিখুন :