জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বিকল্প ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পানিফল চাষ। উৎপাদন খরচ কম ও অধিক লাভজনক হওয়ায় পানিফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। অপেক্ষাকৃত নিচু ভূমি হওয়ায় অল্প বৃষ্টিপাতেই এই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকে। তাই এ অঞ্চলের ডুবে থাকা পতিত জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে পানিফল চাষ।
প্রতি বছরই বোরোধান কাটার পর খাল, বিল, ডোবা এবং পতিত জমিতে পানিফল চাষ করেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। এই পানিফল চাষে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘাতে লাভ থাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় পানিফল চাষ দিন দিন জনপ্রিয়তা পেয়েছে এসব এলাকায়।
প্রতিদিন ভোর হতেই পানিতে নেমে পানিফল সংগ্রহ শুরু করেন কৃষকরা। বিল থেকেই কৃষকদের কাছে থেকে পানিফল কিনে নিয়ে যায় স্থানীয় পাইকাররা। পানিফলকে ঘিরে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে গড়ে ওঠেছে পানিফল বাজার। এই বাজারে জামালপুরসহ পার্শবর্তী বিভিন্ন জেলার পাইকারদের দেখতে পাওয়া যায়।
পানিফল দেখতে অনেকটা সিঙ্গারার মতোই। তাই স্থানীয়রা এই ফলকে ‘সিঙ্গারা’ নামেই চিনে থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় এই পানিফলের বাহারি সব নামও রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ‘ওয়াটার চেস্টনাট’ ও বলা হয়। পানিফলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’। এ ফল কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়।
স্থানীয় চাষিরা জানায়, পানিফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। এর ফলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পানিফল চাষে চাষিদের খরচ অনেকটাই কম। পতিত জলাশয়ে পানিফলের চারা রোপণ করে শুধুমাত্র পরিচর্যা করলেইে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বিভিন্ন পতিত ডোবা, খাল, পুকুরের অল্প পানিতেই পানিফল চাষ করা সম্ভব। যার কারণে এই চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন চাষিরা।
আব্বাস আলী নামের এক চাষি জানান, এবার তিনি ১৪ বিঘা জমিতে এই পানি ফল চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে খরচ পড়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে এবার বাজার দর ভালো থাকাতে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
নীরব হোসেন নামে একজন বলেন, পানিফল চাষে খরচ ও শ্রম দুটোই কম লাগে। বছর এই সময়টাই এসব জমিতে পানি থাকাতে অন্য কোন ফসল চাষ করা যায় না। তাই তারা এসব জমিতে দীর্ঘদিন ধরে পানি ফল চাষ করে আসছেন। এই অঞ্চলে পানিফলের চাহিদাও বেশি।
বাজারে পানি ফল কিনতে আসা এক পাইকার জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় আট থেকে ১০ মণ পানি ফল বিক্রি করেন। এই ফল দামে কম ও সুস্বাদু হওয়াতে স্থানীয় খুচরা বাজারে এই ফলের চাহিদা অনেক বেশি।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর আজাদ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এ বছর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পানির নীচে ডুবে থাকা ৪৫ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের এই পানিফল চাষে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ বলেও জানান তিনি। পানিফল চাষে অধিক লাভ হওয়ায় ইতোমধ্যেই এই এলাকার কৃষকদের মধ্যে পানিফল চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
জামালপুরে নদী তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পতিত জমিতে উৎপাদিত সু-স্বাদু ফলটি জেলার চাহিদা পুরণ করে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে চলে যাচ্ছে। পানিফল চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করবে এমন প্রত্যাশা পানিফল চাষিদের।
আপনার মতামত লিখুন :