সড়কের নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিল তুলে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় শাহজাদপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারো মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রায় সাড়ে ৩ বছর
ধরে রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচলে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। সেইসাথে ওই ওয়ার্ডের শতাধিক গো-খামারি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থসহ এলাকাবাসীকেও নিত্যদিন পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ-দুর্গতি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই সড়কের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনরূপ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ নিয়ে জনমনে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে স্থানীয়রা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সড়কটি নির্মাণের দাবী জানিয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রথম শ্রেণির শাহজাদপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের এ সড়কের বেহাল দশা প্রায় এক যুগ ধরে। গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ইউজি ওয়ান ওয়ানপি-৩ প্রকল্পের (নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প) অধীনস্থ প্রায় ৩ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উক্ত ওয়ার্ডের নলুয়ার শামসুলের বাড়ি থেকে শাহজাহান মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য কাজ পায় নাটোর জেলার ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলম। প্রায় ৩ বছর আগে ওই সড়কের ইট ও মটির সামান্য কাজ করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ঠিকাদারকে সড়কের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিঠি দিলেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে কোন সাড়া মেলেনি।
সরেজমিন ওই সড়ক পরিদর্শনকালে ভুক্তভোগী ওয়ার্ডবাসী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, শাহজাদপুর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্বেও ৭ নং ওয়ার্ডের নলুয়া শামসুলের বাড়ি থেকে শাহজাহান মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. রাস্তাটি বেহাল দশাই রয়েছে। শাহজাদপুর পৌরসভার দুগ্ধসমৃদ্ধ ওই ওয়ার্ডে রয়েছে শতাধিক গো-খামার ও একাধিক দুগ্ধ সমিতি। এ রাস্তাটির পাশেই রয়েছে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও পথচারীদের চলাচলে প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে রাস্তাটির সামান্য মাটির কাজ করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করে ঠিকাদার পালিয়ে যায়। এরপর থেকে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এলাকাবাসীর স্বাভাবিক যাতায়াতে ছন্দপতন ঘটেছে।
এদিকে, প্রাচীন বিদ্যাপীঠ নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুন্নাহার জানান, তার স্কুলে যাতায়াতের জন্য ওই সড়কটিই মাত্র মাধ্যম। এতে ইট বিছানো ছিল। ঠিকাদার রাস্তাটি পাঁকা করতে এসে রাস্তার ইট সরিয়ে ফেলে।
এতে রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়। বর্ষা এলে গর্তে হাঁটুপানি জমে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে যায়। বাদবাকিরা কাঁদামাটি মাড়িয়ে স্কুলে আসলেও চর্মরোগসহ তারা নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।
নলুয়া প্রাথমিক দুগ্ধ সমবায় সমিতির লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক হারুন-অর-রশীদ জানান, এলাকায় শতাধিক গো-খামার রয়েছে। এসব গো-খামারকে কেন্দ্র করে দুটি দুগ্ধ সমিতিও রয়েছে। ওই দুই সমিতির মাধ্যমে সমবায়ী গো-খামারিরা মিল্কভিটা দুধ সরবরাহ করে। রাস্তাটির বেহালদশা হওয়ায় অনেক কষ্ট করে তাদের মিল্কভিটা দুধ পৌঁছাতে হয়। সময় মত মিল্কভিটার বাঘাবাড়ি কারখানায় দুধ পৌঁছাতে না পারলে অনেক অনেক সময় মিল্কভিটা দুধ নিতেও অনিহা প্রকাশ করে ।
শাহজাদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরু জানান, গত ৩ বছর আগে শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদী নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর গুরুত্বপূর্ন ওই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি একটি মামলায় জেলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন আব্দুল রাজ্জাক। ওই সময় ঠিকাদার রাস্তার কাজের ৩০ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়ে সটকে পড়ে। তখন থেকই ঠিকাদার মীর হাবিবুর আলমকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, নাটোরের ঠিকাদার মীর হাবিবুল আলমের বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, তিনি এই পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। সিডিউলে কি ছিল তা আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে তৎকালীন সময়ে দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে তিনি পরামর্শ দেন।
অপরদিকে, তৎকালীন সময়ে পৌরসভায দ্বায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস.এম ইকবাল হাসান বলেন, কিছুটা মাটির কাজ করার পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৩০ লাখ টাকা বিল দেয়া হয়। পরবর্তীতে তারা অজ্ঞাত কারণে কাজ না করে চলে যায়। এ ব্যপারে তাদের বারবার চিঠি দিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোন জবাব দেয়নি।
তিনি আরও জানান, আমদানি করা পাথরের আরসিসি ঢালাই করে রাস্তাটি নির্মাণ করার কথা ছিল।
শাহজাদপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ইউজি ওয়ান ওয়ানপি-৩ প্রকল্পের (নগর পরিচালন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প) অধীনে প্রায় ৩ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই সড়কটি নির্মাণের কথা ছিলো। সময়মত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হয়ায় উক্ত প্রকল্পের অর্থ ফেরত চলে যাওয়ায় রাস্তার কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। পরবর্তীতে অর্থ বরাদ্দ হলে রাস্তার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :