ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

মধ্যরাতে কম্বল হাতে মানবিক ডিসি ফরিদা খানম

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

মধ্যরাতে কম্বল হাতে মানবিক ডিসি ফরিদা খানম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাত প্রায় পৌনে ১টা। গাঢ় কুয়াশায় ছেয়ে নগরজুড়ে। কুয়াশাভরা নিশিরাতে সাঁইসাঁই করে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের পাজেরো। তার পেছনে সাদা রঙের পিকআপ। সরকারি কোনো প্রোগ্রাম না থাকলে জরুরি কোনো কাজ ছাড়া সাধারণত এতরাতে ঘরের বাইরে থাকেন না জেলা প্রশাসক। তার ওপর উনি একজন নারী! সবার একটাই প্রশ্ন, এত রাতে কোথায় যান ডিসি ফরিদা? কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর জানতে পিছু নিলাম আমি। আমার সাথে আরও কয়েকজন ‘নিশাচর’ সংবাদকর্মী।

রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে সার্কিট হাউজ থেকে গাড়ি বেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল রেলওয়ে স্টেশন, কদমতলির দিকে। পিছু নিলাম আমরা। আমাদের পিছনে জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন সহকারী কমিশনারসহ এডিসির গাড়ি। রাত দেড়টার দিকে গাড়ি থেকে নামলেন ফরিদা খানম। গায়ে চাদর মোড়ানো, হাতে কম্বল। চোখের সামনে হতদরিদ্র যাকেই পাচ্ছেন মায়াভরা হাতে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন গায়ে। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু বাদ যাচ্ছেন না কেউই। এমন কি মানসিক ভারসাম্যহীনরাও।  

নগরীর কদমতলী মোড়ে শাহেদ নামে এক পথচারীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেক বছর ধরেই এই এলাকায় বসবাস করছি। কখনো দেখিনি কোনো জেলা প্রশাসক এত রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে গরিব মানুষের গায়ে চাদর জড়িয়ে দিচ্ছেন। কখনো শুনিনি, কোনো জেলা প্রশাসক পথচারী কোনো নারীর মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছেন মা? সরকারি কম্বল পেয়েছেন তো?

স্টেশন রোড, কদমতলী, সিআরবি, কাজির দেউড়ি, গোলপাহাড়, প্রবর্তক মোড়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চকবাজার, চট্টগ্রাম কলেজ। ষোলশহর দুই নাম্বার গেট থেকে মুরাদপুরÑ পথে পথে শীতার্ত পথচারীদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার কম্বল বিতরণ করেন তিনি। কখনো গাড়ি আবার কখনো সখনো পায়ে হেঁটে। এ যেন এক অন্যরকম দৃশ্য। অন্যরকম এক ফরিদা খানম।

মধ্যরাতে কেন? জিজ্ঞেস করতেই জেলা প্রশাসক বললেন, সরকারি উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের শীতবস্ত্র বিতরণ আমাদের রুটিন কাজ। শহর থেকে শুরু করে উপজেলায় প্রায়ই প্রতিদিনই দিন ও রাতে আমরা কম্বল পৌঁছে দিচ্ছি। মধ্যরাতে আমি বের হয়েছি নগরীর ফুটপাতে যারা থাকেন তাদের দেখতে। হাড়কাঁপানো এই শীতে কেমন থাকেন তারা তা জানতে! সরকারি যে শীতবস্ত্রগুলো বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলো ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না, তা দেখতে। যোগ করেন চট্টগ্রাম প্রথম নারী জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তিনি আরও বলেন, শীতার্ত মানুষগুলোর অনুভূতিগুলোকে আমি অনুভব করতে চেয়েছি- সে কারণে এতরাতে ঘর থেকে বের হওয়া।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার পিস কম্বল ও এক কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব কম্বল পর্যায়ক্রমে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতেও সরকারের দেওয়া এসব কম্বল পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার আল আমিন হোসেন, স্টাফ অফিসার মো. ইসরাফিল জাহান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাইফুল মজুমদার ও জেলা নাজির  জামাল উদ্দিন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!