ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

রূপসী ম্যানগ্রোভ দর্শনার্থীর পদচারণে মুখর

আব্দুল মোমিন, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৯:১৬ এএম

রূপসী ম্যানগ্রোভ দর্শনার্থীর পদচারণে মুখর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাতক্ষীরার দেবহাটা রূপসী ম্যানগ্রোভ শীতের উষ্ণতায় সেজেছে নতুন রূপে। দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রমণপিপাসুদের প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ানোকে সামনে রেখে জেলার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর তীরে সুন্দরবনের আদলে রূপসী ম্যানগ্রোভকে সাজানো হয়েছে। ইছামতি নদীর সামনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্ত ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। আর এ কারণে শীতের সকালে বা স্নিগ্ধ বিকেলে দর্শনার্থীদের জন্য মুখর হয়ে উঠেছে রূপসী ম্যানগ্রোভ। 

নতুনরূপে প্রস্তুত করা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত নান্দনিক পিকনিক স্পট রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটনকেন্দ্রটি। প্রতিবছর বিভিন্ন ছুটিসহ আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে গরম বা শীত এবং বিভিন্ন ঈদ ও পূজা সামনে রেখে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে এ পর্যটনকেন্দ্র। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে একটু বিনোদন আর আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীরা সদলবলে ভিড় জমান এখানে। 

বিশেষ করে পর্যটনকেন্দ্রটির কোলঘেঁষে প্রবহমান ইছামতি নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বারবার কাছে টানে পর্যটকদের। পড়ন্ত বিকেলে ইছামতির পানিতে অস্তমিত রক্তিম সূর্যের আলোর ঝলকানি, নদীর তীরে প্রিয়জনের সাথে রোমাঞ্চকর কিছু সময় কাটানো, ইচ্ছা হলেই প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো, ট্রেইল বেয়ে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ম্যানগ্রোভ বনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে আবাসস্থলে ফেরা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি, আর ভাটির টানে নদীর পানি কমে গেলে ইছামতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালুরচরে ছুটে বেড়ানো অনেকটা সমুদ্রসৈকতের মতো অনুভূতির সঞ্চার করে সব বয়সের মানুষের মনে। তাতেই যেন বিমোহিত হয়ে এ পর্যটনকেন্দ্রটির প্রেমে পড়েন দর্শনার্থীরা।

জানা যায়, ২০১২ পরবর্তী তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম তরিকুল ইসলামের উদ্যোগে সরকারি খাসজমিতে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয় এই রূপসী ম্যানগ্রোভ। সে জন্য সুন্দরবন থেকে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী ও গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির চারা এনে এখানে রোপণ করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে রূপসী ম্যানগ্রোভকে নতুন নতুন রূপ দেওয়ার কাজ করেন। 

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান যোগদান করে এখানে বিনোদনের জন্য নানা রকম ইভেন্ট তৈরি করেন। ইছামতি নদীর কূল ঘেঁষে এই বিনোদনকেন্দ্রটি সাধারণ মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য তিনি কাজ শুরু করেন। তিনি এই নান্দনিক বিনোদনকেন্দ্রটিকে আরো নৈসর্গিক রূপ দিতে নতুন নতুন ইভেন্ট, নতুন করে আবাসিক স্থান, ট্রেইলসহ নানা রকম কাজ করেছেন।

দর্শনার্থীদের পছন্দ আর প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিয়ে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটনকেন্দ্রের বাড়তি সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। তাইতো জেলা শহর থেকে ২৫ কিমি দূরের এ পর্যটনকেন্দ্রে ২০ বিঘা জমিতে অনামিকা লেক, শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা, সভা-সমাবেশের জন্য কনফারেন্স রুম, ফটোসেশনের জন্য আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী একাধিক সেলফি পয়েন্ট, লেকের পানিতে প্যাডাল বোট, কফিশপ, নানা ধরনের কৃত্রিম জীবজন্তু, ঘোড়ার গাড়ি, রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

শুধু তাই নয়, সীমান্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ইতিমধ্যেই বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি সেখানে পৌঁছেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা নামাজের স্থান, ওয়াশরুম, এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রেখেছে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জেলার মধ্যে এই রূপসী ম্যানগ্রোভটি সব শ্রেণির মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও অন্যরকম অনুভূতির জায়গা উল্লেখ করে জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এই বিনোদন কেন্দ্রটিকে নানা রকম রূপসহ নতুন নতুন লুক দেওয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। 

তিনি বলেন, সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় প্রশাসনের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে এসে যেমন বিমোহিত হন, ঠিক তেমনি সাধারণ মানুষও এখানে এসে প্রশান্তি পান। সব দিক বিবেচনা করেই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এই বিনোদন কেন্দ্রটি ভ্রমণপিপাসুদের অন্যরকম এক আকর্ষণে পরিণত করে গড়ে তোলা হয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!