মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

শিথিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

শিথিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

ছবি: সংগৃহীত

দেশে মাদক ব্যবহারের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতায়। গত কয়েক মাসে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। বর্তমানে মাদক পাওয়া এত সহজ হয়ে উঠেছে যে, হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ও দেশ থেকে অর্থপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৩ সালের জুনে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আংকটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা) মাদকের কারণে পাচার হয়ে যায়। অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়াতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক সেবন এখন প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে এবং এর কোনো রাখঢাক নেই। এছাড়া এর নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা অবস্থা এবং পুলিশের শিথিলতায় সারা দেশে মাদক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, দেশে মাদক নিয়ে গভীর কোনো গবেষণা নেই এবং মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। যেসব তথ্য শোনা যায়, তা অনেকটাই অনুমানভিত্তিক। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক গবেষণার প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন তারা।

এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, মাদকদ্রব্য বিশেষত ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদক কারবারিরা সহজে ইয়াবা বহন করতে পারে, আর সীমান্তে মিয়ানমার থেকে মাদক চোরাচালান সহজে করা যায়। পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, দেশের মাদক পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এ ছাড়া, মাদক সেবনে শিক্ষার্থীরা এখন আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৯ শিক্ষার্থীকে মাদক সেবনরত অবস্থায় আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু ছাত্রীও ছিলেন। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জে এক যুবকসহ দুজনকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে, যারা হাসপাতালের ভেতরে মাদক সেবন ও বিক্রিও করছিলেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবদুল ওয়াদুদ  বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। শক্তিশালী করা হচ্ছে অভিযান। গত রোববার ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ধরা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।’

যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তাই স্টেশনে থাকেন না। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্য থাকে ঢাকায়। তাদের পোস্টিং মফস্বলে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কম অবস্থান করেন। এমন কর্মকর্তাও আছেন, যারা ৩৬৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থলে মাত্র কয়েক দিন দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফোন ধরেননি।

সূত্র মতে, একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শিথিলতা, অন্যদিকে ঘুষ খাওয়া। মাদকের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারের পুলিশের দিকে। ওই অঞ্চল দিয়েই ইয়াবার মতো ভয়াবহ মাদক পাচার হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তৎকালীন এসপি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহর ইয়াবা সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার বিষয় উঠে আসে। এরপর হৈচৈ পড়ে যায়। পরে এসপিকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বর্তমান এসপির দায়িত্ব পালন করছেন মো. সাইফ উদ্দিন শাহীন। তার সঙ্গে মাদকের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি মিডিয়া অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত এসপি মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী ফোনই ধরেননি।

পুলিশের ডিআইজি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের অনেকে মনোবলের কথা বলে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন। আবার তাদেরই কারো কারো বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এটি অদ্ভুত বিষয় যে ঘুষের ক্ষেত্রে মনোবলের অভাব হচ্ছে না। পুলিশের তরফ থেকে সেই সব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, ইয়াবা রোধ করাটা আসলে চ্যালেঞ্জিং। এই মাদকের টাইপটা অনেক ছোট হওয়ায় মাদক কারবারিরা সহজে বহন করতে পারে। আর রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ এর সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সীমান্তে সন্দেহভাজন ছাড়া সবাইকে তল্লাশি করাও যায় না। সীমান্তে তারকাটার বেড়া থাকলে কিছুটা কমানো যেত। ওপেন ল্যান্ডের কারণে মিয়ানমার থেকে সহজে দেশে মাদকের চোরাচালান আসছে।

এ বিষয়ে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফারুক হোসাইন খান বলেন, ‘আমরা মাদকের চোরাচালান রোধের চেষ্টা করছি। মাদক কারবারিদেরও ধরছি।’

সার্বিক এই পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশে মাদক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। যে যার মতো তথ্য হাজির করে। মাদক নিয়ে গভীর গবেষণা হওয়া উচিত। প্রকৃত অর্থে দেশে কত মাদকসেবী রয়েছে, কারবারি রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার বিপজ্জনক রোগ। এইডস, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো মাদকাসক্তিও ভয়াবহ একটি রোগ। এটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও ক্ষতিকর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ের উপপরিচালক (গোয়েন্দা) খোরশেদ চঞ্চল বলেন, মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের পথে তরুণ প্রজন্ম। শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়—সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাদকের কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। তরুণসমাজ হারিয়ে ফেলছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। এই ভয়াল মাদকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন, নষ্ট হচ্ছে আস্থা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজে তৈরি হচ্ছে নতুন আতঙ্ক।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

আরবি/এফআই

Link copied!