দীর্ঘদিন মহিলা লীগ নেত্রী রুপা খাতুন নিজ বাসায় একটি মিনিবার চালাতেন। সেখানে মনোরঞ্জন করতেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা। রুপাকে এসব অপকর্ম চালাতে সহযোগিতা করতেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহীন চাকলাদার।
শাহীনের ছত্রছায়াই দলীয় কোনো পদে না থেকেও মহিলা লীগ নেত্রী রুপা ছিলেন বেপরোয়া। এ ছাড়া টাকাওয়ালা পুরুষদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে মোটা টাকা দেনমহর দিতে বলতেন। এরপর বেশ কিছুদিন সংসার করে ডিভোর্স (তালাক) দিয়ে দেনমোহরের টাকার দাবি করতেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই তার সঙ্গে আপস করতেন। এভাবেই যুবলীগ নেত্র রুপা প্রতারণা করতেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রুপার বিরুদ্ধে মাদকের ব্যবসা, নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো, একাধিক বিয়ে করে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং সত্যতা পেয়ে তাকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা শহরের তালতলা গ্রামের শ্মশানপাড়ার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মহিলা লীগ নেত্রী রুপাকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ এয়ারগান, একটি হাঁসুয়া, একটি বঁটি, একাধিক পাসপোর্ট ও জমি বিক্রির নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘রুপার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সে বিয়ে করে মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর নিতেন। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৮ থেকে ১০টি বিয়ের অভিযোগ এসেছে। রুপা মাদক ব্যবসা, নারীদের দিয়ে দেহব্যসাসহ বিভিন্ন অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে এসব অপরাধের তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
পুলিশ বলছে, রুপার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার ও নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুপা জানিয়েছেন, টাকাগুলো জমি বিক্রির। এ করণে টাকাগুলো ফেরত দেওয়া হবে। তবে অবৈধভাবে অস্ত্র রাখা ও মানুষকে ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রুপার মাথায় যশোর-৬ আসনের সাবেক এমপি পলাতক শাহীন চাকলাদারের হাত ছিল। এ জন্য তিনি দলের বড় পদে না থাকলেও শাহীনের ছত্রছায়াই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রুপা সব সময় প্রোটকল নিয়ে চলাচল করতেন।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, রুপা একাধিক নারীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। জেলা যুব মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করতেন। এ ছাড়া জোরপূর্বক নেশাদ্রব্য খাইয়ে ঘুমের মধ্যে যুবতীদের সঙ্গে পুরুষদের অনৈতিক কাজ করিয়ে ভিডিও করে রাখতেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। তবে তারা গণমাধ্যমের সামনে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
আপনার মতামত লিখুন :