ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস ক্যাডারে চাকরির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস ক্যাডারে চাকরির অভিযোগ

অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান রিপন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে  কোটার সুযোগ নিয়ে ২৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন। গত জুলাই  বিপ্লবের সময়ে নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি নরসিংদীতে ছাত্রদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করেছেন। জুলাই নির্যাতনের কারণে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পুলিশ সুপারকে ওএসডি করে রেখেছেন। 

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা জনাব আনসার আলী এসংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের কর্মস্থল পুলিশ সদর দপ্তরে দাখিল করে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সাল পর্যন্ত যে চারটি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে, সেখানে পুলিশ সুপারের পিতা মো. সাহাব উদ্দিনের নাম নাই। এমনকি তিনি কখনও আবেদন করেন নাই। হঠাৎ করে ২০০৪ সালে আবেদন করেন এবং ২০০৫ সালের ২৭ মেই, তিনি গেজেট ভুক্ত  হন। সাং ছালুয়াতলা, উপজেলা নালিতাবাড়ী, জেলা শেরপুর নিবাসী মো. সাহাব উদ্দিন, পিতা মৃত লাল মাহমুদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ২০১৭ সালে বাতিল করার সুপারিশ করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি। উপজেলা কমিটির সুপারিশ এই প্রতিবেদকের কাছে আছে, সেখানে দেখা যায় মো. সাহাব উদ্দিনকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি খন্দকার মো. আব্দুর রহিম এবং সদস্য সচিব নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরফদার সোহেল রহমানসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত ডকুমেন্টস আছে। এটি উপজেলা থেকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এর কাছে প্রেরণ করা হয় ২০১৭ সালে। কিন্তু  মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উদ্দিনের আরেক ছেলে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি দীর্ঘদিন স্থগিত রাখে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার আনসার আলী, পিতা বশীর আলী, বয়স ৫০ বছর, নিজ উদ্যােগে, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বিষয়টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে প্রেরণ করেন।  

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন-ভুয়া সনদ চিহ্নিতের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জেলা, উপজেলা পর্যায়ে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেসব এলাকার মানুষ চিহ্নিত করবে।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সত্যিকার অর্থে যুদ্ধ করেছিলেন, তারা নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। তাঁদের কথা এলাকার সকলেই জানে। তবে যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা জনগণই তাদের চিহ্নিত করবে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা সরকারি চাকরি নিয়েছে তাদের তালিকা করছে মন্ত্রণালয়। এসব সনদও যাচাই–বাছাই করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, আসল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার মধ্যেই মিলে আছে ভুয়াদের নাম। এগুলোই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭৬ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার পুরো ১৬ বছরের শাসনামলে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভুক্ত হতে হয়রানির শিকার হলেও মন্ত্রী-এমপি-মেয়রসহ দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ জামুকার বিশেষ কমিটির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির সুযোগ পেয়েছেন। 

অথচ তাঁরা সময়মতো অনলাইনে বা সরাসরি আবেদন করেননি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যক্তিগত শুনানির মাধ্যমে সেসব আবেদন বিশেষ কমিটিতে পাঠাতেন। এই বিশেষ সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন বলেও অভিযোগ আছে। আরও অভিযোগ আছে, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক হয়রানি করা হতো।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সরকারের আমলে পাঁচবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটি এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম প্রকাশ করেছিল। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের করা তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। ১৯৯৪ সালে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে চতুর্থ তালিকায় এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়।

এবিষয়ে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় তিনি বেশ কিছুদিন যাবত আত্মগোপনে আছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!