গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার আগে তিনি পনের বছরে নিজস্ব লোকবল দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন দেশের প্রতিটি খাত।
আয়া থেকে শুরু করে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা, সবাই যেন তার লোকজন। এতো সহজে এদের দমনের যাবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক। আর তাইতো শেখ হাসিনাও বর্ডারের ওপারে বসে গুনছেন দিনক্ষণ।
এবার বেরিয়ে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। আগামী নির্বাচনই যেন শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছেন অন্তত ১৪ জন ইনসাইডার।
ঢাকার অভিজাত এলাকায় এখন চলছে গোপন বৈঠক। স্তুপ করা ফাইল ঘেটে ঘেটে দেখা হচ্ছে কোথায় কি আছে।
ফাইলের প্রতিটা পাতা থেকে খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে গোপন তথ্য। টার্গেট আগামী নির্বাচন। ছক কষছেন। ইনসাইডারদের লক্ষ্য শেখ হাসিনাকে ফেরানো।
যাদের মধ্যে কিছুলোক ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারে অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন এবং খুবই সাবধানতার সাথে চালাচ্ছেন তাদের চাল। খুবই ধীরলয়ে করছেন পরিকল্পনা।
ইনসাইডারদের আরও লক্ষ্য, নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরানো।
কিভাবে এই পদে ওই চক্রে লোক বসানো যায়, সেই রোডম্যাপ তৈরি করছেন তারা।
সম্প্রতি কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুকে এক পোস্টে ওই ইনসাইডারদের নিয়ে কথা বলেছেন।
ওই পোস্টে জুলকারনাইন লিখেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কতিপয় উপদেষ্টা যারা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যে নিয়ে সরকারে প্রবেশ করেছে, তারা কিছুতেই সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এই চক্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতরও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’
এই সাংবাদিক দাবি করেন, ‘সরকারের বাইরে থাকা এই চক্রের কয়েকজন অনুঘটকের নাম আমি আগেও বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি। যদি অনতিবিলম্বে এদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে।’
তিনি এও লিখেন, ‘ওই চক্রের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছেন। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে, ড.ইউনূসও সম্ভবত তার পদটি ত্যাগ করবেন।আর সেই সুযোগে তার পদটি বাগিয়ে নিতে সচেষ্ট রয়েছে ওই চক্র।’
‘সে লক্ষ্যে তাদের পছন্দের একজনকে কিছুদিন আগেই ক্যাবিনেটে নেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা, সচিব, গুরুত্বপূর্ণপদ, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা— সব মিলিয়ে এদের মূল ইনসাইডার সংখ্যা ৯ জন। আর ভাইটাল আউটসাইড এক্টর আরো ৫ জন, এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন রয়েছেন।’
তবে ইনসাইডারদের নাম প্রকাশ করেননি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। তবে উপযুক্ত সময়ে তাদের নাম ও বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তার পোস্টে আরও লিখেন, ‘সাধারণ জনগন ও রাজনৈতিক দলগুলোর এদের বিষয়ে সোচ্চার ও রুঁখে দেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে।’
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বিদেশে পালিয়ে যান। অপকর্মের কারণে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন।