আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের স্বনামধন্য শিল্পগোষ্ঠী ভাইয়া গ্রুপের ভাইয়া হাউজিংয়ের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. শেখ সাফায়েত আলমকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) অফিসিয়াল এক সিদ্ধান্তে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
পাশাপাশি সাফায়েতের সঙ্গে কোম্পানি-সংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ।
তার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভাইয়া হাউজিং কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, অভিযুক্ত সাফায়েত কোম্পানির গোপন তথ্য ফাঁস করে অন্যত্র সরবরাহ করেছেন। সহকর্মীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অন্য কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছেন।
অভিযুক্ত সাফায়েতকে নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২১ এপ্রিল ভাইয়া হাউজিংয়ের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে নিয়োগ পান শেখ সাফায়েত আলম। তার বাবার নাম শেখ মাহবুব আলম। তিনি মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের গজনবীর স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে আদাবরের ‘এ’ ব্লকের ৫ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে বাস করেন।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কর্তৃপক্ষের সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনিয়ম করে গেছেন। এ ছাড়া কোম্পানির গোপন তথ্য প্রতিদ্বন্দ্বী সমমানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
সাফায়েত প্রতিষ্ঠানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের এজিএম পদের সুবাদে কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার বিভিন্ন সময়ের আর্থিক অনিয়ম ও কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় অডিট বিভাগের তদন্ত কার্যক্রম চলমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাফায়েত শুধু প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য পাচার, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অনৈতিক কাজে জড়িত নন, সম্প্রতি তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ভাইয়া হাউজিং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় নিজেকে বাঁচাতে এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে গত দুই মাস ধরে উচ্চ বেতন ও পদের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ভাইয়া হাউজিং থেকে বের করে নিতে চাইছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাইয়া হাউজিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সাফায়েতের কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর তিনি কোম্পানি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে নিতে মোটা অঙ্কের বেতনের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রলোভনের ফাঁদে দু’একজন কর্মচারী সারা দেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা সাফায়েতের ফাঁদে পড়েছেন বুঝতে পেরে ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন এবং উচ্চ বেতন ও পদবিতে যোগদানের জন্য সংঘবদ্ধ গ্রুপ তৈরি করাও প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি।’
ভাইয়া হাউজিংয়ের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ জানিয়েছে, সাফায়েতের বিরুদ্ধে অডিট বিভাগের তদন্ত কার্যক্রম চলমান। ওই তদন্তে যদি আরও আর্থিক গরমিল বা অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আর্থিক কেলেঙ্কারি, অনৈতিক কাজে জড়িত, কোম্পানির নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং প্রতারণার অভিযোগে শেখ সাফায়েতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে অন্য কোথাও নিয়োগের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ভাইয়া হাউজিং মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ।
এ ধরনের কর্মকর্তাকে চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে পরবর্তীকালে কোনো ধরনের ঝামেলা হলে ভাইয়া হাউজিং কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের দায় নেবে না বলে কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে।