সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম

‘উত্তরাধিকার’ সূত্রে সিলেটে প্রার্থী হতে পারেন ৪ নারী

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম

‘উত্তরাধিকার’ সূত্রে সিলেটে প্রার্থী হতে পারেন ৪ নারী

ছবি: রূপালি বাংলাদেশ

কেউ প্রার্থী হতে চান মরহুম স্বামীর আসনে। কেউ প্রয়াত বাবার স্বপ্নপূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদিও তারা রাজনীতির মানুষ নন, ছিলেনও না কখনো। তবে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। রাজনীতিক স্বামী-পিতার মৃত্যু অথবা গুমের কারণে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রার্থী হতে চাইছেন উত্তরসূরির আসনে। তারা সবাই জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হয়ে যেতে চান মহান জাতীয় সংসদে। স্বামী ও বাবার হয়ে করতে চান মানুষের সেবা। সেই লক্ষ্যে তাদের কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন সরাসরি। কেউ আবার নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন, সময়-সুযোগে প্রত্যাশার কথা জানাবেন দলের হাইকমান্ডের কাছে। সে রকমই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। যথারীতি আবার পরিবারও সামাল দিচ্ছেন। তারা খুব দ্রুত উঠে আসছেন দৃশ্যপটে। দৃশ্যমান করছেন রাজনৈতিক প্রভাব। তারা হলেন তাহমিনা রুশদী লুনা, সালমা আক্তার, অ্যাডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম ও ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। প্রত্যেকেই সিলেটে বিএনপির রাজনীতির যোগ্য উত্তরসূরি। সংসদীয় আসনের উত্তরাধিকারী। তারা স্বামী ও পিতার প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা, যে আবেগ, সেটাকে কাজে লাগিয়ে যেতে চান সংসদে। এ কারণে দিন শেষে তাদের কাউকে হয়তো প্রার্থী করতেও পারে দল বিএনপি।

তাদের মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সংসদ সদস্য ও গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহমিনা রুশদী লুনা। স্বামীর অবর্তমানে তিনি বিএনপির হাল ধরেছেন নিজ নির্বাচনিী এলাকায়। জায়গা পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে। 

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গাড়িচালকসহ ‘গুম’ হন এম ইলিয়াস আলী। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত একটি নাম। সিলেটের সর্বকালের জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে তিনি একজন। তরুণ রাজনৈতিক প্রজন্মের কাছে তিনি ছিলেন আইডল। গুমের পর থেকে আর তার কোনো খোঁজ নেই। রাজনীতিবিদ স্বামীর অবর্তমানে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন তার নির্বাচনি এলাকায়। সেখানে তিনি রাজনৈতিকভাবে তৎপর রয়েছেন। সংসার ও রাজনীতিতে সময় দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হলে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে স্বামীর আসনে (সিলেট-২, বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচন কমিশন অযাচিতভাবে তার প্রার্থিতা বাতিল করে। সে সময় অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে রুশদীর লুনার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। বর্তমানে তিনি সরাসরি সিগন্যাল পেয়েই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য সেই আসনে প্রায় খালি মাঠ। আর কোনো দাবিদারও নেই। কোনো নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় তার আসনে আছে সংসদে যাওয়ার মতো বিএনপির নেতৃত্বের শূন্যতা। তবে প্রবাস থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সেলিমের কথা অনেকে ভাবলেও ইলিয়াস পরিবারের প্রতি তার দুর্বলতা ও সহমর্মিতার কারণে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ থাকলেও তিনি এই মুহূর্তে মাঠে আসছেন না। ফলে তিনি সেখানে একাই রয়েছেন এই মুহূর্তে। 

এই আলোচনায় আছেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধরমপাশা-মধ্যনগর) নির্বাচনি এলাকার একাধিকবারের সংসদ সদস্য নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা আক্তারও। এলাকায় স্বামীর নাম নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করে পরিচিতি পেয়েছেন সালমা নজির নামে।
কিছুদিন আগে তিনি স্বামীর নির্বাচনি এলাকার একটি উপজেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেই থেকে সরাসরি নাম লিখিয়েছেন রাজনীতিতে।

বাংলাদেশে হাওরাঞ্চলের আসনখ্যাত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধরমপাশা-মধ্যনগর) নির্বাচনি এলাকার একাধিকবারের সংসদ সদস্য ছিলেন নজির হোসেন। স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় এই নেতা ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর নির্বাচনি এলাকায় রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল থেকে তাকে দল ও অনুসারীদের হাল ধরার অনুরোধ জানানো হয়। সালমা আক্তারের পেশা ব্যাংকার। বর্তমানে চাকরি থেকে অবসর জীবন যাপন করছেন। তবে তিনি এখন মাঠে তৎপর। আগেও ব্যস্ত রাজনীতিবিদের জীবনসঙ্গী হিসেবে তার ব্যস্ততা ছিল, কিন্তু তা ছিল অন্তরালে। বিশেষ কোনো উপলক্ষ ছাড়া তাকে দেখা যেত না। অন্তরালের সেই রুটিন পুরোটাই পালটে গেছে স্বামীর অবর্তমানে। নিজেকে এখন পুরোপুরি রাজনীতির পোশাকে বদলে দিচ্ছেন তিনি। রাজনীতির মাঠে নিজেকে নিবেদিত করে রাখছেন। তিনিও স্বামীর মতো হয়ে উঠতে চান সিলেট অঞ্চলে নিজের এলাকায় ভোটের রাজনীতির অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি স্বামীর আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি যে আসনে প্রার্থিতার আগ্রহ দেখাচ্ছেন, সেখানে বিএনপির শক্তিশালী কোনো প্রার্থীও নেই। অন্য এলাকা থেকে গিয়ে সিলেট বিএনপির ত্যাগী নেতা বদরুজ্জামান সেলিম সেই অভাব পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। উদ্দেশ্য, সংসদ নির্বাচনে দলের টিকিট পাওয়া।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন দিলদার হোসেন সেলিম। দিলদার সেলিমের মৃত্যুর পর এই আসনে তার অসমাপ্ত কাজ করে যেতে চান সহধর্মিণী। স্বামীর পরিচয়ে জনগণের ভালোবাসাও পাচ্ছেন তিনি। বিগত দিনে স্বামীর সঙ্গে থেকে সাধারণ মানুষের সেবা ও এলাকার উন্নয়ন করার অভিজ্ঞতা আছে তার। 

অ্যাডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম সিলেট জেলা মহিলা দলের প্রথম সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদিকা। তিনি একজন সফল আইনজীবী। তিনি সিলেট ডিস্ট্রিক ল ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিউকিটরের (এপিপি) দায়িত্ব পালন করেছেন।

অবশ্য প্রার্থী হওয়ার জন্য রাজনৈতিক মহলে সরাসরি কোনো রকম আগ্রহ না দেখালেও নিকটজনের কাছে রাজনীতিক মরহুম পিতার হয়ে এলাকাবাসীর জন্য কাজের আকাঙ্ক্ষা দেখিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। স্থানীয়দেরও আগ্রহ, বাবার জায়গায় তিনি আসুন। কাজের সুযোগ পেলে মেধাবী সামিরা এলাকা ও রাজনীতিকে দিতে পারবেন অনেক কিছু। 

হারিছ চৌধুরীর গত ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে প্রফেসর মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার সাভারে দাফন করা হয়। ৫ আগস্টের পর হারিছ চৌধুরীর কবর সিলেটে স্থানান্তর করেন তার কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে সিলেট ও কানাইঘাট বিএনপির নেতাকর্মীদের। 

তার বাবার পুরো নাম আবুল হারিছ চৌধুরী। তিনি সিলেটের সন্তান। একজন মুক্তিযোদ্ধা। রাজনীতিবিদও। সিলেটের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। সিলেটের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, তখন থেকেই তিনি আত্মগোপনে। দীর্ঘ ১৫ বছর ছদ্মবেশে রাজধানী ঢাকার পান্থপথেই কাটিয়েছেন। অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়েছেন বারবার। একমাত্র পরিবারই জানত তার আত্মগোপনের খবর। শেষবার ২০২১ সালের আগস্টে যখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হন, ছদ্মবেশেই তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। 

মেধাবী সন্তান রাজনীতিতে সরাসরি নেই। তবে তিনি নিকটজনদের জানিয়েছেন, কখনো সুযোগ হলে মানুষের সেবা করতে চান। ব্যারিস্টার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী এর মাধ্যমে রাজনীতির আকাক্সক্ষার কথাই প্রকাশ করেছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!