ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় আত্মগোপনে আ.লীগ নেতারা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০১:৪২ পিএম

গোপালগঞ্জ ও ঢাকায় আত্মগোপনে আ.লীগ নেতারা

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার এক মাস পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য অবৈধভাবে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। সীমান্ত পার হতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

একাধিক সূত্র থেকে জানাযায়, গত সপ্তাহে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন।

হাসিনার দেশ ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকের ক্ষমতাশালী আত্মীয়স্বজনরাও যেন হারিয়ে গেছেন। গুঞ্জন রয়েছে, বেশির ভাগ স্বজন হাসিনার আগেই দেশ ছেড়েছেন। আবার অনেকে দেশেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় হওয়া হাসিনার স্বজনদের মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

কোটা সংস্কার থেকে হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের নেতাকর্মীদের গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণহানি হয়। আহত হয় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রায় ১ হাজার মানুষ চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়। চোখ হারায় হাজারখানেক মানুষ। হাসিনার দোসররা বল প্রয়োগ করে ছাত্র-জনতাকে দমিয়ে রেখে আন্দোলন রুখে দিতে চেয়েছিল। স্বৈরাচারী হাসিনার মতো তার আত্মীয়স্বজনরাও দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।

জানা গেছে, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের বেশির ভাগ সদস্যই এখন আর দেশে নেই।

তবে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দেশ ছাড়তে পারেনি বলে জানা গেছে। শেখ সেলিমের সন্তানেরাও দেশে লুকিয়ে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে বরিশালে প্রভাবশালী নেতা আবদুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ছোট ছেলেকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। তার আরেক ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই সিটির বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দেশেই আত্মগোপনে আছেন।

বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হেলাল সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন। তবে তার ছেলে বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময় দেশ ছাড়তে পারেননি। তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় আছেন বলে জানা গেছে।

শেখ হাসিনার ভাতিজা মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এবং তার ভাই ফরিদপুর-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এসব মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও তাদের সন্তানেরাও আত্মগোপনে রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর তাদের প্রকাশ্য দেখা যায়নি।

জানা গেছে, শেখ পরিবাররে সদস্যদের মধ্যে যারা দেশে আত্মগোপনে তাদের অনেকেই গোপালঞ্জ জেলায় আবার অনেকেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের আত্মগোপনে থাকতে গোয়েন্দা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সদস্যদের শেল্টারে রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে অনেকে ক্যান্টনমেন্টে আশ্রিত অবস্থায় আছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৫০০ অধিক রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রাণহানির ভয়ে সেনাবাহিনীর আশ্রয় পান। সেনাপ্রধান আশ্রয় নেওয়াদের সংখ্যা বললেও তাদের নাম প্রকাশ করেনি।

শেখ হাসিনার দেড় দশকের ক্ষমতার আমলে তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনরা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন, অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা আর এটিকে ব্যবহার করে তারই আত্মীয়স্বজনরা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। ঘুষ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বদলি বানিজ্য করে মালিক হয়েছেন অবৈধ সম্পদের। দেশের বিভিন্ন স্থানে হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ পুরোনো। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদে দেশজুড়ে তারা রামরাজত্ব কায়েম করেছিল।
 

আরবি/এস

Link copied!