ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ডিবির টর্চার সেলের মূল কারিগর ডিসি মশিউর

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৮:৩০ পিএম

ডিবির টর্চার সেলের মূল কারিগর ডিসি মশিউর

ছবি সংগূহীত

ঢাকা: রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক ডিসি মশিউর রহমান রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। জানাগেছে, ডিবির টর্চার সেলের মূল কারিগর ছিলেন ডিসি মশিউর।

মশিউরের কারণে পুলিশ কর্মকর্তারও ছিলেন কোণঠাসা। তা ছাড়া দায়িত্বে থাকার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন, বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে মশিউরের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। সেই সঙ্গে অনেক অপরাধের কথা স্বীকারও করেছেন। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে মশিউরকে গ্রেপ্তার করার পর শুক্রবার আদালত তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা এর আগে দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট থানার নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মারা যান। এই হত্যার পেছনে হাত রয়েছে মশিউরের। ওয়াদুদ মারা যাওয়ার পর এ ঘটনায় তার শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলার আসামি এই মশিউর।

জানতে চাইলে মামলার বাদী আব্দুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যার ঘটনায় মশিউর দায় স্বীকার করেছেন। তা ছাড়া ওই এলাকায় তিনি অনেক দিন ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেক মানুষকে মশিউর কোনো ধরনের অপরাধ ছাড়াই মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। তিনি পুলিশের পোশাকের আড়ালে ভয়াবহ অপরাধে যুক্ত ছিলেন।

মাঠপর্যায়ের একাধিক সংবাদকর্মী রূপালী বাংলাদেশকে অভিযোগ করে বলেন, মশিউরের অপরাধের কোনো সীমা নেই। তার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি জনসম্মুখে সাংবাদিকদের হুমকি দিতেন। তাতে কাজ না হলে অত্যাচার করতেন। নিয়মিত বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করতেন। এ ছাড়া, মামলা ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। এভাবেই দীর্ঘদিন অবৈধভাবে টাকা রোজগার করতেন পুলিশের এই অসাধু কর্মকর্তা।

ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতা আল-আমিন বলেন, আমাকে কয়েকবার মশিউর বিনা অপরাধে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়ে ১৫ দিন একটি গোপন কক্ষে আটকে রাখেন। সেখানে সন্ধ্যার পর শুরু হতো নিযার্তন। আর বলা হতো ছাত্রদল আর করবি?

তিনি আরও বলেন, মশিউরের বিরুদ্ধে এমন অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। পুলিশের পোশাকের আড়ালে তিনি নানা ধরনের অপরাধ করতেন। হাসিনার পুলিশ ডিপার্টমেন্টও সেটা জানত কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে কেউ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অপরাধ করলেই তার শাস্তি পেতে হয়, যার প্রমাণ এই মশিউর বলে জানান ওই ছাত্রনেতা।

পুলিশের ওই সূত্র জানায়, মশিউর রাস্তাঘাট ও রেললাইনে বসবাস করা অর্থাৎ ভাসমান মানুষদের ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে ঢাকার বাইরে নিয়ে যেত এবং তাদের বহুল আলোচিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতেন। এমন অসংখ্য মানুষের অভিযোগের পর বিষয়টি আমলে নিয়ে ডিবি পুলিশ এখন তদন্ত করছে।

এ ছাড়া, মশিউর ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদকে দিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা বার্তা জাতির সামনে তুলে ধরতেন। হারুন ও মশিউরের কাছে ডিবির অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা তাদের বিরুদ্ধে নিউজ করতেন তারা মশিউর-হারুনের অপপ্রচার ও বুলিংয়ের শিকার হতেন।

আরবি/এস

Link copied!