ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তিন ছাত্রনেতার সন্ধান চায় পরিবার

এনামুল হক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম

তিন ছাত্রনেতার সন্ধান চায় পরিবার

ছাত্রদলের নেতা আল-আমিন , আসাদুজ্জামান রানা ও মাজাহারুল ইসলাম রাসেল। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: ছাত্রদলের নেতা আল-আমিন। ২০১৩ সালে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে উঠিয়ে নেয় র‍্যাব (১)। আল-আমিনের ছোট ভাই রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, সেই সময়ে র‍্যাবের প্রধান বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হয়। এভাবে উঠিয়ে নেয় আরো দুজনকে। তারা হলেন আসাদুজ্জামান রানা, মাজাহারুল ইসলাম রাসেল। এরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তৎকালীন এই তিন নেতা।
আওয়ামী সরকারের আমলে গুম হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের তিন ছাত্রনেতার খোঁজ চায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও তাদের পরিবার। এরপর আর তাদের খোঁজ পায়নি কেউ।

শাখা ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, গুম হওয়া তিন নেতা প্রত্যেকে তৎকালীন সময়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বে ছিলেন। জবি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে তারা সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন। তবে এই দীর্ঘ ১০ বছরে তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। পরিবারের কেউ জানেন না তারা বেঁচে আছে কি না।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আয়না ঘর থেকে গুম হওয়া অনেক নেতা ছাড়া পেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ হওয়া এই তিন নেতার। স্বজনদের দাবি সরকারি ও দলীয়ভাবে তাদেরকে খোঁজ করা হোক। একই দাবি জবি শাখা ছাত্রদলের। গুম হওয়া মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বড় ভাই মো. মশিউর রহমান জানান, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয় রাসেল। সেই সময়ে রাসেল জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, তেজগাঁও অঞ্চলের নাখালপাড়ায় তারা থাকতো। সেদিন বসুন্ধরা থেকে র‍্যাব-১ রাসেলকে উঠিয়ে নেয়। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ভাইয়ের কোন খোঁজ নেই। ভাইয়ের চিন্তায় বাবা-মা আজ অসুস্থ। সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি ভাইকে ফিরিয়ে দেয়া হোক। তার খোঁজ করা হোক কোথায় আছে এখন।

২০১৩ এর ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন আসাদুজ্জামান রানা। গুম হওয়া জবি ছাত্রদলের নেতা আসাদুজ্জামান রানা বড় বোন  মোছা. মিনারা বেগম জানান, সেই সময়ে রানা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ থানার মথুরাপুর গ্রামে। পিতা আব্দুর রাজ্জাক ও মাতা আয়েশা সিদ্দিকার সন্তান  ছিলেন তিনি।

বড় বোন বলেন, রানা আমার সাথে থাকতো। আমার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করতো। হঠাৎ করে যখন নিখোঁজ হলো তখন মুগদা থানাতে জিডি করেছিলাম। মানববন্ধন করেছি অনেকবার। ভাইয়ের খোঁজে সব জায়গায় গেছি। ভাইকে পাইনি। ভাইকে ফেরত চাই।

গুম হওয়া আরেক নেতা আল-আমিনের ছোট ভাই রুহুল আমিন জানান, ২০১৩ সালে বসুন্ধরা আসাবিক এলাকা থেকে তাদেরকে উঠিয়ে নেয় র‍্যাব (১)। অভিযোগ করে তিনি বলেন, সেই সময়ে র‍্যাবের প্রধান বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু র‍্যাবের পক্ষ থেকে বারবার অস্বীকার করে। ভাইয়ের খোঁজে পরিবারের পক্ষ থেকে ভাটারা থানায় মামলাও কর হয়। তবে এই মামলার কোন অগ্রগতি ছিল না।

গুম হওয়া এই তিন নেতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাদের কারো নামেই কোন মামলা ছিলো না। কোন মামলায় তাদের গ্রেপ্তারও দেখানো হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ, প্রশাসন ও র‍্যাবসহ উর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন খোঁজ মেলেনি। উল্টো নানাবিধ হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখা হতো পরিবারকে। গুম ও খুনের বিচারের দাবি জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, গুম ও খুন করা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। এই ১৬ বছর যাবত অনেক গুম খুন করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এই তিন সম্মানিত সহ-সভাপতি গুমের শিকার হয়েছে আমরা অতি দ্রুত এই তিনজনকে জনসম্মুখে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে বিশেষ অনুরোধ করছি এবং এই গুম খুনের জন্য গণহত্যাকারী হাসিনাসহ যারা এর সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির ব্যবস্থা করার জন্য রাজপথে দাবি নিয়ে নামবো।

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, বিগত গুমতান্ত্রিক সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে এ দেশের অসংখ্য দেশপ্রেমী সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গুম করা হয়েছে। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তিন নিবেদিত প্রাণ রাসেল,রানা ও আল আমিন। যাদেরকে ছাত্রদল করার অপরাধে ও দেশের পক্ষে কথা বলার কারণে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সাদা পোশাকধারী বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। বার বার সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েও তাদের কোন খোঁজ পাইনি। তাদের ত্যাগের প্রতি গভীর সম্মান জানিয়ে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি করা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন তিনি।আমরা জাতীয়তাবাদী পরিবার বিশ্বাস এবং দাবী রাখি আমাদের সহযোদ্ধাদের দ্রুতসময়ের মধ্যে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা গুম হওয়া সকল ব্যক্তিকে ফেরত চাই। তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। সরকারের কাছে দাবি অতি দ্রুত তাদের খুঁজে বের করা হোক। একই সাথে যারা এই গুম খুনে জড়িত ছিল তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

আরবি/জেডআর

Link copied!