ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কর ফাঁকি

মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০১:৫০ পিএম

মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: কর ফাঁকি-অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত যে সকল ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সত্তার নাম ‘পানামা এবং প্যারাডাইস‘ পেপারসে এসেছে তাদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে একটি তদন্ত কমিটি করে কাজ করছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একইসাথে, অর্থ পাচার প্রতিরোধে বর্তমান সরকার খুবই শক্ত অবস্থানে রয়েছে। পাচার প্রতিরোধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানাযায়, অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বর্তমান সরকার। যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। কিন্তু এখনো কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এখনো পুরোপুরিভাবে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ পাচারকারীরা দেশের শত্রু, তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। এসব বিষয়ে নতুন সরকার, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাদের গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে সিআইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অবৈধ হুন্ডিচক্র, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে। এসব বিষয় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেমন কঠোর অবস্থানে সরকার, ঠিক তেমন সিআইডি ও কঠোর অবস্থানে থেকে এসব প্রতিরোধে কাজ করবে।’

সূত্র জানায়, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) একটি দল বেশ কয়েকজন অর্থ পাচারকারীদের নজরে রেখেছে। তাদের ধরতে যে কোন সময় অভিযান শুরু হবে।

গোয়েন্দা তথ্য জানায়, ‘এমএফএসের তথ্যের ভিত্তিতে হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করতে সরকারি বিভিন্ন বাহিনী। তাছাড়া অর্থ পাচারকারীদের যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট তথ্যেরভিত্তিতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনতে তৎপর সরকার।

সূত্রমতে, রেমিট্যান্সের ওপর রিজার্ভ পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভরশীল। চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়লে স্বস্তিও বাড়বে। এসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে অবৈধ পথে আয় উপার্জন কারীদের বিরুদ্ধে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য হুন্ডিচক্র ও পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে আসছে নতুন অভিযান।

সিআইডি সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নানাভাবে পাচার হয়েছে অর্থ। শুধুমাত্র হুন্ডির মাধ্যমেই কমপক্ষে প্রতিবছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কড়া নজরদারি করা হচ্ছে পাচার চক্রের ওপর।

অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের গন্তব্যস্থল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে, প্রাথমিকভাবে সেসব দেশে এবং পরবর্তী সময়ে অন্যত্র সুবিধামতো জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির বিষফোঁড়া হলো অর্থ পাচার। হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে গেছে অর্থ।

সিআইডি বলছে, অর্থ পাচার রোধে যার যার অস্থান থেকে সর্তক থাকতে হবে। তাছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো হাজার হাজার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার রয়েছে দেশে। এসব মানি এক্সচেঞ্জারদের মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করছে দুষ্কৃতিকারীরা। তবে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অর্থ পাচার প্রতিরোধের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বেশ কিছু সফলতাও  আস্তে শুরু করেছে।

সিআইডি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশ থেকে প্রতি বছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি শুরু হলে হুন্ডি ব্যবসা অনেকটা কমে যায়। সেজন্য প্রায় দুই বছর বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসে এবং ২০২১ সালে আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দিক থেকেই করোনা মহামারির প্রকোপ কমে এলে হুন্ডি ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমে যাওয়ার ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে; যা শতকরা হিসেবে ১৫ শতাংশ কম। শুধু হুন্ডির মাধ্যমেই নয়, আরও নানা উপায়ে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।

আগের সরকারের সময় কাটআউট‍‍` পদ্ধতিতে অর্থপাচার হয়েছে। অনেকেই অসৎ উপায়ে অর্জিত টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে একশ্রেণির ব্যবসায়ী বিদেশে উন্নত জীবন কাটানোর কিংবা বিকল্প ব্যবসার উদ্দেশ্যে অর্থ পাচার করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিগ্রস্ত অনেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা মালয়েশিয়ায় জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় কিংবা ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থার জন্য অর্থ পাচার করেছে। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ অন্যান্য অবৈধ ব্যবসার (যেমন ক্যাসিনো) মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে নিরাপদে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পাচার হয়েছে। উন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে রাখা এবং নিজেও গোপনে ওই দেশের নাগরিক হয়ে ভবিষ্যতে নিরাপত্তার জন্য অর্থ পাচার জড়িত অনেক অসাধু কর্মকর্তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, ‘এর আগের সরকারের সময় দিন দিন অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েই চলছিল। আশা করি এখন অনেকটা কমে যাবে। অনেক সময় দেখা গেছে গোয়েন্দা বাহিনী পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করে ঢালাওভাবে প্রচার করেছে। তবে এতে তেমন কোনো ফল আসছে না। এবং সর্তক হয়নি পাচার চক্র, তারা নির্মূলও হয়নি। এদের বিষয়ে বর্তমান সরকার এবং বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার আরো কঠোর হতে হবে ও নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে তাহলে অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা অনেকটা সম্ভব।’

 

আরবি/এস

Link copied!