ঢাকা সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আত্মগোপনে এমপি রণজিত রায়

মেহেদী হাসান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম

আত্মগোপনে এমপি রণজিত রায়

ছবি সংগূহীত

ঢাকা:  যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) বাবু রণজিত কুমার রায় নির্বাচিত হওয়ার আগে পরিবার নিয়ে একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন। তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৫ বছর। এই লম্বা সময় তিনি দেশে এবং দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন।এমপির বড় ছেলে বাজীব রায়ও বাবার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ভারতে পাচার করেছেন হাজার কোটি টাকা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে এমপি রণজিত রায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রণজিত। তখন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকায় তার ভাগ্যবদল হয়। এ সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রকেট গতিতে বেড়েছে। সঙ্গে তার স্ত্রী নিয়তি রানিও অর্জন করেছেন অঢেল সম্পদ। এমপি হওয়ার পর থেকে ভারতে বসবাস করতে বেশ পছন্দ করতেন এই দম্পতি।

এদিকে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় রণজিত কুমার রায় উল্লেখ করেছিলেন স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার স্ত্রী নিয়তি রানির সম্পদের মূল্য ৮৫ হাজার টাকা। দেড় দশক পরের হলফনামায় তিনিই উল্লেখ করেছেন স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৮ টাকা। এর আগে স্ত্রীর কোনো গাড়ি না থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার রয়েছে। তবে তার স্ত্রীর বর্তমানেও কোনো আয় নেই। আগেও ছিল না।

আর ২০০৮ সালে রণজিত রায়ের আয় ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৮ টাকা। এইচএসসি পাস রণজিতের আয়ের উৎস পারিতোষিক, ব্যবসা, কৃষি ও ভাড়া আদায় বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি রণজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে পৈতৃক সূত্রে ৪ বিঘা কৃষি জমির মালিক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরও ১২ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। অবাক করা তথ্য হলো মাত্র এক লাখ টাকায় কিনেছেন ১২ বিঘা জমি। সেই হিসাবে প্রতি বিঘা জমির মূল্য দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ৮ হাজার টাকা।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, স্ত্রীর নিয়তির নামে ২০০৮ সালে কোনো জমি বা বাড়ি না থাকলেও বর্তমানে ৩টি বাড়ি রয়েছে।  যার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। একইসঙ্গে বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে আরও ৫০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে রণজিত কুমার রায়ের কাছে এক লাখ টাকা নগদ থাকলেও বতমানে তার হাতে নগদ ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা নগদ ছিল। বর্তমানে তার কাছে ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ নগদ টাকা রয়েছে। আগে ব্যাংকিং সঞ্চয় ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) হিসেবে কোনো টাকা না থাকলেও বর্তমানে এমপি রণজিত দম্পতির ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯২ টাকা আছে। তার কোনো দায়-দেনা নেই। তবে স্ত্রী ও নিজের সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করলেও হলফনামায় এমপি রণজিত কুমার রায় তার সন্তানদের সম্পদের কোনো তথ্য দেননি।

যশোর ও বাঘারপাড়ায় কিনেছেন ৪৫০ বিঘা জমি/নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ: সাবেক এই এমপি অবৈধ্য পথে রোজগার করে যশোর শহর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় কিনেছেন ৪৫০ বিঘা জমি। যেটা তিনি কখনো হলফনামায় উল্লেখ করেননি। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা বাচ্চু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এক কোটি টাকা দামের একটি পাজেরো জিপ, দুই ছেলের ৬০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি প্রাইভেটকার, স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইভেটকার ও ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭টি কাভার্ডভ্যান রয়েছে। এ ছাড়াও কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন রণজিৎ রায় ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে যশোরের জেস টাওয়ারে জনতা ব্যাংকের শাখায় একটি লকারে রক্ষিত দুশ ভরি স্বর্ণের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন রণজিৎ রায়। ওই সময় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের মালিকানা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
 

আরবি/এস

Link copied!