ঢাকা শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গুলি কর; না হলে তোরে আমি গুলি করব, ওসি অপূর্ব

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০২:৪২ পিএম

গুলি কর; না হলে তোরে আমি গুলি করব, ওসি অপূর্ব

ছবি সংগূহীত

ঢাকা: যে গুলি করবে না, তাকে আমি গুলি করব’ (মাইরা তো আমরা ফেলছি) এখন কী করবা?’ ওসি অপূর্ব হাসান দম্ভভরা কথার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। থানার অফিসারদের কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে এভাবেই নির্দেশ দেন পল্লবী থানার সাবেক ভাইরাল ওসি অপূর্ব।  

তার এমন নির্দেশনার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল ভাইরাল হওয়া ওসি অপূর্ব হাসান ও তার বাহিনী। আন্দোলন থামাতে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লাহ ও আওয়ামী লীগের নেতারা। গত ২২ আগস্ট পল্লবী থানার সাবেক ওসি অপূর্ব হাসানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা হয়েছে।

অপকর্মের শেষ নেই গোপালগঞ্জের ওসি অপূর্ব হাসানের। সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বজন শেখ সেলিম ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদাজ্জামান খান কামালের প্রশ্রয়ে ‘ক্ষমতাবান ওসি’ হয়ে উঠেন তিনি। প্লট ফ্ল্যাট গাড়ি ঘের খামারসহ শত শত কোটি টাকার মালিক হলেও দৃশ্যত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দুদক বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। সরকার পরিবর্তন হলেও ছাত্র-জনতার উপর গুলি কের হত্যাযজ্ঞে সরাসরি অংশ নেয়া ওসি অপূর্ব হাসান এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

গত ১৯ জুলাইয়ের পর ওসি অপূর্ব হাসানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে পড়ে। যেখানে অপূর্ব ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘মাইরা তো ফালাইছি। এখন কি করবা বলো।’ আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করেই এসব কথা বলছিলেন ডিএমপির সাবেক এই প্রভাবশালী ওসি। তবে কোন প্রেক্ষাপটে তিনি শিক্ষার্থীদের এই কথাগুলো বলেছিলেন সেটি জানা যায়নি। বিষয়টি জানার জন্য তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

পল্লবী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করলে ১৮ জুলাই রাজধানীর মিরপুরের সেকশন ১০, ১১ ও ১২-তেও জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। এমসয় লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও তাদের সরানো সম্ভব হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায়ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তখন বেলা সাড়ে ১১টা। সকল অফিসারকে ডেকে ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, ‘এখন থেকে গুলি করতে হবে। যে গুলি করবে না তাকে আমি গুলি করে দেব।’

তার এমন নির্দেশনার পর আন্দোলন বন্ধ করতে নির্বিচারে গুলি চালান অপূর্ব হাসান ও তার বাহিনী। এসময় যারা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছেন, তারা হলেন ওসি অপূর্ব হাসান, পরিদর্শক অপারেশন আমিনুল, পরিদর্শক তদন্ত মোখলেস, এসআই আজাদ, এসআই পার্থ, এসআই লোক চৌহান। সেদিন মিরপুর ১০ নম্বরের সড়ক ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। চারদিকেই দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের আহাজারি। শুধু মিরপুর অরিজিনাল ১০ এর আজমল হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন ৪৫০ জন রোগী।

ওই রাতে পুলিশের গুলিতে মিরপুর ১০ নম্বর বেনারসি পল্লিতে জিহাদ নামের এক কিশোর নিহত হয়। নিহত ওই কিশোর রাব্বানী হোটেলের স্টাফ ছিল। মৃত্যুর পর নিথর দেহ সড়কে পড়েছিল কয়েক ঘণ্টা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিহাদ ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ পুলিশের একটি গুলি এসে তার কপাল ছেদ করে বেড়িয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ১৮ জুলাই বিহারি ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দা আন্দোলনে অংশ নেন। তাদের অংশগ্রহণ থামাতে বিহারি নেতাদের মিরপুর মডেল থানায় ডেকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখান মিরপুর বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লা, পল্লবী থানার ওসি অপূর্ব হাসান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। হুমকির পরও কাজ না হলে বিহারি ক্যাম্পে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মিরপুর ১০ নম্বরের বিহারিদের থার্টিন হার্টস ক্যাম্পে ১৯ জুলাই হঠাৎ গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। কোনো কারণ ছাড়াই গলিতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে পুলিশ।
 

আরবি/এস

Link copied!