ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস

সংস্কার-বিচারের মাধ্যমে ঘুঁরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

শাহীন করিম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪, ০১:১২ এএম

সংস্কার-বিচারের মাধ্যমে ঘুঁরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

*মাসপূর্তিতে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করবে বৈষম্যবিরোধী সংগঠন
*পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তারা
*এখন পর্যন্ত ২৭০ মামলায় সাড়ে ২৬ হাজার আসামি

 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পরিণতিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। দেড় যুগ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণআন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করে ওই দিনই ভারতে আশ্রয় নেন।

রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের সেই রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট ‘বিপ্লবের’ আজ এক মাস। ওই ভয়াবহ আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশের নির্বিচারে গুলি ও হামলায় ‘গণহত্যায়‘ অন্তত সাত শতাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হন। একই সময়ে পাল্টা প্রতিরোধ ও জনরোষে ৭৪ পুলিশ সদস্য ছাড়াও শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও প্রাণ হারান। এরপর ছাত্রদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে এসে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কও। দায়িত্ব নিয়েই ভেঙে পড়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগ ও পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল ও দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করে সংস্কার বা পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি দূর করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একমাস পূর্তি উপলক্ষে এবং আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে রাজধানীতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মাসপূর্তিতে ‘শহীদি মার্চ’ করবে বৈষম্যবিরোধী সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ দুপুর ৩টায় কেন্দ্রীয়ভাবে ‘শহীদি মার্চ’ শুরু হয়ে নিউমার্কেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদি মার্চ কর্মসূচির ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। ওদিকে শেখ হাসিনার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ করার পর নতুন করে নিয়োগ দিয়ে ঢেলে সাজানো হয়। 

আর সবচেয়ে বিধ্বস্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারদের নতুন করে করে নিয়োগ দেওয়া হয়। গোটা বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল করার পাশাপাশি বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও ছাত্র-হত্যাকাণ্ডে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা প্রায় ১২ জন অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। 

অন্যদিকে জনপ্রশাসনের বেশ কয়েকজন সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা হয়।

এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর এক মাস পার হলেও এখনো তার প্রশাসন এবং তার দলের বেশির ভাগ নেতারা দেশে কিংবা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মূলত, বিগত ১৫ বছরে গুম-খুনে ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী ও নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মকর্তারা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। শেখ হাসিনার প্রশাসনের পতনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, বিক্ষুব্ধ জনতা তার দলের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করে অনেককে হত্যা করে। সারাদেশে প্রায় ৪০০ থানায় আক্রমণ করে অস্ত্র লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আর এসব হামলার ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আবার পালানোর চেষ্টা করার সময় কয়েকজনকে ধরা হয়, পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যাযঞ্জ, বিগত সময়ে বিএনপির ওপর দমন-পীড়ন ও বিডিআর ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে হত্যা মামলা দায়ের শুরু হয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত মোট ২৭০টি মামলা হয়। এতে নামধারী আসামি প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার ও অজ্ঞাতনামা ১ লাখ ৬৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্তত ১০৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১০০টি ছাত্র-জনতাকে হত্যা মামলা। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বহু মামলার আসামি হয়েও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আমির হোসেন আমু, হাছান মাহমুদ, নসরুল হামিদ বিপু, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, মনিরুল ইসলাম ও বিপ্লব কুমার সরকারসহ অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অপরদিকে সবশেষ মঙ্গলবার রাতে সাবেক দুই আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল তাদের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এর আগে গত ৭ আগস্ট দেশের বাইরে পালানোর সময় ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং তার প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের ওপর সহিংসভাবে দমন করে শেখ হাসিনাকে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনেক মামলার মূল পরিকল্পনাকারী হওয়ার অভিযোগে তাকে ৬ আগস্ট চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে সিলেট সীমান্তে আটক হয়ে পরবর্তী সময়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন আহমেদ মানিক।

এ ছাড়া ১৩ আগস্ট নৌকায় করে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনার প্রশাসনের বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিছু মানুষ তাদের শনাক্ত করে এবং ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ দুই ছাত্রকে হত্যার মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না পলাতক ছিলেন। ২৬ আগস্ট ভারতের সীমান্ত রাজ্য মেঘালয়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। 
যে কারণে শেখ হাসিনা সরকারের পতন : সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হলো ‘একনায়ক’ হিসেবে।

ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে তার শাসনের পতনের পেছনে একগুঁয়েমি, অহংকার ও অতি আত্মবিশ্বাস এসব বিষয়কে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একক কর্তৃত্বের শাসনে শেখ হাসিনার সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমা বিশ্বকে শত্রু বানিয়ে শেষপর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অবশেষে গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, এই ১৫ বছরে বেশির ভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের যে ক্ষমতার ভিত্তি, তার কোনোটাই টেকসই ছিল না। কারণ তারা জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে মানুষের একটা ক্যাটালিস্ট বা স্ফুলিঙ্গের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়। ফলে সরকারবিরোধী একটা আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে ওঠে, সেই আন্দোলন ঘিরেও মানুষের ক্ষোভের জন্ম হয়, তখন সেনাবাহিনী, কারফিউ বা পুলিশের পরোয়ানা না করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ গণভবনের উদ্দেশ্যে পথে নেমে আসার পর সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ১৫ বছরের একটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম সবকিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ কোটা আন্দোলনের একটা উপলক্ষ্য করে একটা পরিবর্তনের আশায় নেমে আসে। তুমুল আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটে।

শেখ হাসিনার পতনের পিছনে গ্যাং অব ফোর:

ভারতীয় একটি পত্রিকার প্রতিবেদন মতে, চারজনের ওই চক্রটি শেখ হাসিনাকে দেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল বলে সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে চারজনের একটি চক্র বা ‘গ্যাং অব ফোর’ দায়ী বলে দাবি করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। চারজনের ওই চক্রটি শেখ হাসিনাকে দেশের বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। 

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা মনে করেন, যারা মনে করেন শেখ হাসিনার তাদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলে চলে গেছেন, এখন তাদের জীবন বিপন্ন। এক নেতা অভিযোগ করে জানান, শেখ হাসিনা তাদের কথা শোনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পেছনে তিনি দলের ভেতরের ‘দ্য গ্যাং অব ফোর’ চক্রকে দায়ী করেন। চক্রের সদস্য হিসেবে তিনি শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম উল্লেখ করেন।

যেভাবে আ.লীগ সরকারের পতন : শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি হাইকোর্ট বাতিল করার প্রতিক্রিয়ায়। ১ জুলাই মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

তাদের টানা কর্মসূচির মধ্যে সরকারও হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে, ফলে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হয় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’। কিছুক্ষণ পর সেই সেøাগান পাল্টে বলা হয়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’

সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।’ পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।’ সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। সেদিন সংঘর্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রদল নেতাসহ তিনজন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও এক হকার এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।

তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। 

পরের তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ঘটে দুই শতাধিক মানুষের। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। ঘটনার পরম্পরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জানানো হয়। পরদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সারাদেশে পুলিশসহ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অবশেষে ৫ আগস্ট বেলা ১১টার পর থেকে লাখো জনতা ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে বিকেল ৪টার দিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!