বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ জুন, ২০২৪, ০৫:১১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কোটি টাকার টানেল; বছর না যেতেই চুয়ে পড়ছে পানি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বান্দরবানের নির্মিত দৃষ্টিনন্দন টানেল কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হলেও নির্মাণে বছর না যেতেই টানেলের ভিতর প্রাচীর ফেটে চুয়ে চুয়ে পড়ছে পানি। টানেল ভিতর বেশ কয়েকটি স্থানে প্রাচীর ফেটে পানি চুয়ে পড়ার ফলে সড়কের স্যাতস্যাতে কাদামাটি পরিণত হওয়ার পাশাপাশি টানেলটি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পাহাড়ের দু’পাশে মাঝখানে নির্মিত এই টানেলটি পাহাড় থেকে মাটি ধ্বস ও পানি পড়ার কারণ হিসেবে কতৃপক্ষ অবহেলা ও গাফিলতি কারণে এমন দূর্দশা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পথচারীরা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টানেলটি তৈরি করার পর থেকে নেয়া হয়নি কোন রক্ষনাবেক্ষণের উদ্যেগ। উদ্বোধনে পর টানেলটি সৌন্দর্যভাবে দেখা গেলেও পরবর্তীতে সেই চিত্র পালটে যায়। দীর্ঘদিন মাস ধরে টানেল ভিতরে রাখা হচ্ছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। এই টানেল সড়ক দিয়ে হাজার মানুষের চলাচল করে থাকে।

টানেল ভিতর বাস রাখা কারণে সড়ক সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে অতিষ্ট পথচারীরা। আর সেই সাথে ওয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়ার কারণে টানেল ধ্বসের পড়া আতঙ্কে রয়েছে সড়কের চলাচলকারীরা। এতে কতৃপক্ষ তদারকি না করা কারণে এমন দুর্দশা চিত্র ফুটে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসীরা।

জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ৫০০ ফুট লম্বা টানেল সড়ক নির্মানের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন রাজু কন্ট্রাকশন স্বত্বধিকারী ঠিকাদার রাজু বড়ুয়া। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজটি শুরু হলেও দুই দফায় অর্থ বরাদ্দের পর ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলে তৃতীয় দফায় অর্থ বরাদ্দের পর নির্মাণকাজ শেষ হয় গতবছর। এরপর ২৭ অক্টোবর সকালে টানেল সড়কের ফলক উন্মোচন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং। কিন্তু উদ্বোধনের এক বছর না পেরোতেই বিভিন্ন স্থান থেকে ওয়াল ফেঁটে পানি চুয়েঁ পড়ার এমন দুর্দশা ও দুর্নীতির চিত্র দেখা মিলেছে । 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নির্মিত দৃষ্টিনন্দন টানেলটি ৫২০ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতার লম্বা। এই টানেল ভিতরে রাখা হয়েছে বাস, ট্রাকসহ অনান্য যানবাহন। টানেল ভিতর গিয়ে দেখা মিলে অন্য রকম চিত্র। ওয়ালে দু’পাশে ছেদ হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। আবার কিছু কিছু ওয়ালেও পানি চুয়ে পড়ার চলমান। পানি পড়ার কারণে সড়কে জমাট হচ্ছে কাদামাটি এবং কার্পেটিং সড়কও গর্তে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় টানেল উপর পানি যাতায়াতের পথ ব্যবস্থা না করাতে ধ্বসে পড়ছে মাটি মিশ্রিত পানি। এতে করে ওয়াল ধ্বসে পড়া আশঙ্কার পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধন হারাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এই টানেলটি।

বাস চালক আব্দুর শুক্কুর বলেন, বাস টার্মিনালের কাজ শেষ না হওয়াই যানবাহন গুলো টানেল ভিতরে রাখতে হচ্ছে। এছাড়া কোন খানে গাড়ি রাখা স্থান নাই। আর দেয়াল থেকে পানি চুয়ে চুয়ে পড়ার কারণে সড়ক গুলো কাদা ও স্যাতস্যাতে পরিণত হয়েছে। কখন যে ওয়াল ধ্বসে পড়ে সেই চিন্তায় আছি।

সড়কের পথচারী আবু সালেহ ও তোফাইল বলেন, টানেলে চারিদিকে গর্ত হওয়ার কারণে দেয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়তে থাকে। যার ফলে সড়কগুলো কাদামাটিতে পরিণত হয়ে ভিজে থাকে। ফলে পথচারীদের চলাচলের নানা সমস্যা সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে। 

এব্যাপারে রাজু কন্ট্রাকশন স্বত্বধিকারী ঠিকাদার রাজু বড়ুয়া সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পটির শেষ করে কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর টানেল নির্মাণের সময় এর উপর দিয়ে পানি চলাচলের তৈরী করা ওয়ার্কারের মধ্যে ছিল নাহ। তবে ওয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ভালো করে বলতে পারবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ- প্রকৌশলী এরশাদ বলেন, টানেল ভেতর যেখানে জয়েন্ট করা হয়েছে সেখান থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। আর পানি জমাট হওয়ার কারণে সড়ক গর্ত হয়েছে। আর এতে কোন সমস্যা হবে নাহ বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বীন ইয়াছির আরাফাত সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

 

মন্তব্য করুন