বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

তীব্র পানি সংকটে বাগেরহাট বাসী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল ও শরণখোলায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পানির জন্য হাহাকার করছে বাগেরহাটের অধিকাংশ এলাকার মানুষ। চারদিকে নদী খালে লবণ পানি এবং পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় চরম সংকট তৈরি হয়েছে। 

খাল-বিল, পুকুর-নালা প্রায় শুকিয়ে গৃহস্থালির কাজ, অজু-গোসল করতে এখন কাদা ও লবণ পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। অপরিষ্কার পানি পান করায় নানা ধরনের পানি বাহিত রোগ বাড়ছে উপকূলজুড়ে।দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। 

পানি সংকট ও অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ১৫ দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোপাল বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

শরণখোলা উপজেলার তাফালবাড়ি, সোনাতলা, বকুলতলা, খুড়িয়াখালী ও শরণখোলা গ্রামের মানুষের এখন ওই একটি পুকুরই ভরসা। ‘ভ্যান-রিকশা করে একবার পানি নিতে ৫০০ টাকা খরচ পড়ছে। সবার পক্ষে ওই টাকা খরচ করে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বকুলতলা গ্রামে পুলিশের দেওয়া একটি পানির প্ল্যান্ট দিয়ে কিছু মানুষ খাবার পানি নিতে পারছেন।’ 

শরণখোলার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন লিটন জানান, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত জেলা পরিষদের একমাত্র পুকুরের পানি শত শত মানুষ ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু এক মাস ধরে পানি শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এখন পানি তুললে কাদা উঠে আসে। অজু-গোসলসহ ঘর-গৃহস্থালির কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন খান বলেন, তাদের এলাকার চিনির খালপাড়, মাছের খালপাড়, সাবারপাড়, বটতলার সব পুকুর-খাল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই। এলাকাবাসী এখন চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী ধানসাগর ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া থেকে পানি এনে কোনো রকমে চলছেন। এলাকায় শিশুদের বেশিরভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ খাল, বিল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। আমড়াছিয়া এলাকায় দুটি পানির প্ল্যান্ট বসানোর কারণে ওই এলাকায় খাবার পানির কিছুটা লাঘব হচ্ছে। তবে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করার মতো কোনো পানি নেই। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশনায় জরুরি ভিত্তিতে একটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। এছাড়া যেসব ন্যানো ফিল্টার ও সোলার ফিল্টারে ত্রুটি রয়েছে, তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ভ্রাম্যমাণ প্ল্যান্ট থেকে উত্তর রাজাপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ পানি সংগ্রহ করছেন। এ প্ল্যান্ট থেকে ঘণ্টায় ৬০০ লিটার করে প্রতিদিন পাঁচ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি দেওয়া যাবে। এ প্ল্যান্ট থেকে দূষিত পানিও বিশুদ্ধ করা সম্ভব। এতে প্রতিদিন খরচ হবে চার হাজার টাকা। 

মন্তব্য করুন