তাজুল ইসলাম পলাশ, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১১ মে, ২০২৪, ১১:৪৩ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭২ শতাংশই কৃষক, কক্সবাজারে ৬ বছরে ২৯ জনের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন, ভৌগোলিক অবস্থান, সচেতনতা ও উঁচু গাছ কাটাসহ নানা কারণে প্রতিবছরই দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বজ্রপাত বেশিরভাগ হয়ে থাকে খোলা মাঠে। কৃষি কিংবা অকৃষি খোলা জমিতে। বজ্রপাত ভূ-পৃষ্ঠের যে স্থানে আঘাত করে সেখান থেকে বিদ্যুৎ ভূমির সব দিকে চলাচল করতে পারে। 

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৬-২০২২ সালের জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায়  বজ্রপাতে ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তারমধ্য ২০১৮ সালে কেউ মারা যায়নি। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ বজ্রপাতে ১১ জন মারা যান। এটিই জেলার সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ২০১৭ সালে ২ জন, ২০১৯ সালে ৪ জন, ২০২০ সালে ৪ জন, ২০২১ সালে ২ জন এবং ২০২২ সালে জুন পর্যন্ত ৪ জন বজ্রপাতে মারা যান। তারমধ্য চকরিয়া ৭ জন, মহেশখালী ৮ জন, কুতুবদিয়া ৬ জন, পেকুয়া ৪ জন, টেকনাফ ২ জন ও উখিয়া ১ জন বজ্রপাতে মারা যান। ২০২৩ সালের ১৯ জুন একই দিনে কুতুবদিয়া ২ জন ও পেকুয়া ১ জনসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে জেলার শিলখালী ইউনিয়নের দিদারুল ইসলাম ও রাজাখালী ইউনিয়নের মো: আরমান নামের দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, 'বজ্রপাতের ইতিমধ্যে দুইজনের মৃত্যুর হয়েছে। বর্ষায় এ সংখ্যা আর-ও বাড়তে পারে। কারণ!  বজ্রপাত রোধে নিজেকে আগে সচেতন হতে হয়।

জেলার বেশির ভাগ মৃত্যু কিন্তু কৃষকের। তারা পরিবেশের অবস্থা না বুঝে খোলা মাঠে মাছ ধরতে ও গবাদিপশু নিয়ে যায়। এতে বজ্রপাত হলে মৃত্যুর আশংকা থাকে'। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'তালগাছ সহ উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষা ও এ মৌসুমের আগে-পরে খুব বেশি বজ্রপাত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়ার ধরনের কারণে এ মৌসুমের সময়টা অনেক বেড়ে গেছে। এমন সব সময়ে বজ্রপাত হচ্ছে- যা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশারও বাইরে। এসব বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭২ শতাংশই কৃষক এবং ৮০ শতাংশের বেশি বজ্রপাত খোলা মাঠে হয়ে থাকে'।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসনের প্রধান সহকারী সিরাজুল বলেন, 'খোলা মাঠে বজ্রপাত হলে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বিদ্যুতায়িত হতে পারে। কেউ যদি বজ্রপাতের লক্ষ্যের কাছাকাছি থাকে তবে ভূমির বৈদ্যুতিক প্রভাবে তার মৃত্যু হতে পারে। তবে গাছের নিচে থাকলে বজ্রপাত ওই গাছের ওপর দিয়েই চলে যায়। মানুষের প্রাণ বেঁচে যায়। মানুষকে সচেতন করা গেলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকাংশে কমে যেত মনে করেন তিনি'।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর এই ৯ মাস জুড়েই হয় বজ্রপাত। তবে এপ্রিল ও জুনে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বজ্রপাত হলেও মৃত্যু হবে না এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। হাওরাঞ্চলসহ দেশের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বসবে এ প্রযুক্তি'।

দুর্যোগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা যায়, গত ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সাড়ে এগার বছরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৯৫১ জন মানুষের। এ হিসাব অনুযায়ী বছরে গড়ে বজ্রপাতে ২৬৫ দশমিক ৫ জনের মৃত্যু হয় এই বজ্রপাতে। 

এদিকে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে অ্যারেস্টর বা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া পাইলট প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে।

মন্তব্য করুন