এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

প্রকাশিত: ৭ জুন, ২০২৪, ০২:৪০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বাঘাইছড়িতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, নদী গর্ভে শতশত একর জমি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাঘাইছড়িতে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। কাচালং নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর চাষের জমি।রাঙামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলায় যেন অবৈধ বালু উত্তোলন মহোৎসবে পরিনত হয়েছে। উপজেলার পুরান মারিশ্যাসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। ভাংগনের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কাচালং নদীর দু’পাড়। নদী ভাংগনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকশত পরিবার। নদী থেকে প্রতিনিয়ত উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।

কাচালং নদী ভাংগন রক্ষায় মোঃ মাহফুজুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি আমার রাইস মিল বাঁচাতে ১৮৭টি বল্লি দিয়ে নদী ভাংগন রক্ষায় ২লক্ষ ১৩হাজার টাকা ব্যয় করি। নদী ভাংগনের মূল কারন হলো বালু উত্তোলন। বালু উত্তোলন বন্ধ হলে কাচালং নদী ভাংগনও বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও আগে ছোট ছোট ভাংগন দেখা দিয়েছিল এবার বড় আকারে ভাংগন শুরু হয়েছে। এভাবে কাচালং নদী ভাংগন অব্যাহত থাকলে আগামী ২-১বছরের মধ্যে অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন কাচালং নদী থেকে প্রায় ২৫টিরও অধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হয়ে থাকে। রহস্যজনক কারনে নীরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।এই সকল অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে  প্রশাসন নিচ্ছে না কোন ধরনের পদক্ষেপ। গত ৭-৮মাস যাবৎ প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তাই বালু উত্তোলনের কারনে হুমকিন মূখে পড়েছে নদীর পাড়ে বসবাসকারী শতশত  পরিবার। এসব বালু ট্রাক্টর ও ডাম্পার দিয়ে পরিবহন করার কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাটা। বালু বহনকারী রাস্তা দিয়ে জনসাধারণ হাটাচলা করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বালু উত্তোলনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে,সাধারণ মানুষও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মধ্যে পরিবর্তন ঘটার ফলে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে,তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে।ফলে মৎস্য প্রজনন-প্রক্রিয়া পাল্টে যাওয়ার পাশা-পাশি চাষাবাদের জমিও নষ্ট হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়, ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে পানিদূষণসহ নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং দিন দিন নদী ভাংগন বৃদ্বি পাচ্ছে। সেই সাথে নদীর তীরবর্তী মানুষের বসতভিটা ও আবাদি জমি ভাঙ্গনের সম্মুখীন হচ্ছে।পুরো হাইড্রোলজিক্যাল কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বালু উত্তোলনের কারনে মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাচালং নদীতে প্রায় ২৫টিরও অধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ৩০টিরও বেশী স্থান থেকে এই সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের ইচ্ছে মত বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। এই বালু উত্তোলনের কারণে একদিকে যেমন নদী ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে অন্যদিকে উত্তোলনকৃত এই বালু অদক্ষ ডাম্পার ট্রাক চালক দিয়ে পরিবহনের ফলে পথচারীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ কারণে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছেন না। এমনকি ড্রাম্পার ট্রাক দিয়ে বেপরোয়া গতিতে বালু পরিবহন করলেও পথচারীরা প্রতিবাদ করার সহস পাচ্ছে না। ডাম্পার চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালেও আমাদের চুপ করে থাকতে হয় তাদের কিছু বলতে গেলে তারা আমাদেরকে উল্টো ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এত বড় সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত  থাকায় প্রশাসনের লোকজন নীরব থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহসও পাচ্ছে না।

সূত্রে জানা যায়, ২৫টির অধিক বালু উত্তোলন মেশিন দিয়ে প্রতিদিন যে হারে বালু উত্তোলন করা হয় তা ছোট-বড় ৫৭টি ড্রাম্পার ট্রাক দিয়ে পরিবহন করা হয়। প্রতিটি ড্রাম্পার ট্রাকে বালু পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্ত সড়কে। এই বালু যেই ব্যবসায়ীরা পরিবহন করে থাকে তাদের বেশীর ভাগ চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্রাদি। অদক্ষ এই চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা সড়ক দিয়ে বালুর গাড়ি চলে সে সড়ক দিয়ে অন্য যানবাহন চলাচলে মারাত্বক সমস্যা হচ্ছে।

কাচালং নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারী নুরুল ইসলাম ওরফে পুতুন বালু ক্রেতার পরিচয়ে মুঠোফোনে বলেন, রোজার ঈদের পর হতে আমার কাছে বালু নাই। আপনাকে আমি বালু দেব কোথা থেকে।বালু আছে শুক্কুর,আনামত ও ইসলামের কাছে। শত শত গাড়ি বালু আমি মানুষকে দেই, এখন আমার কাছে বালু থাকলে অবশ্যই আপনাকে বালু দিতাম। আর যদি কোথায়ও বালু না পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দেব।

যারা কোন রকম পরিবেশ অধিদপ্তরের বা অন্য কোন সরকারী সংস্থার অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে কাচালং নদী থেকে বালু উত্তোলন করে কাচালং নদীকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই চক্রটি।যারা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা হলেন-তোফায়েল আহম্মদ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা-মাষ্টার পাড়া,মোঃ আনামত উল্লাহ-পুরান মারিশ্যা,মোঃ ইসলাম-মাষ্টার পাড়া,নুরুল ইসলাম-ডেবার পাড়,শুক্কুর আলী-মাষ্টার পাড়া, শফি কোস্পানী-পুরান মারিশ্যা,লিটন-মাষ্টার পাড়া,বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-শাহাদাৎ হোসেন,নিজাম উদ্দিন-বটতলীসহ আরো অনেকে। আবুল ফজল বলেন,নদী থেকে বালু উত্তোলন এটাও পরিবেশের ক্ষতি করে।পাহাড় কাটা এবং বন জংগল থেকে অবৈধ ভাবে গাছ কাটাে পরিবেশের ক্ষতি করা। বালু উত্তোলনের কারনে কাচালং নদী ভাংগন, চাষাবাদের ক্ষতিসহ পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।এসব রোধ করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।পাশাপাশি প্রতিবাদ ও করতে হবে। তবে সবার আগে  বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আগে এগিয়ে আসতে হবে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, পাহাড়ি ঢলে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে শ্রোতের কারনে নদী ভাংগন দেখা দিয়েছে। তা গতকাল আমি সরেজমিনে গিয়ে নদী ভাংগন পরিদর্শন করেছি। আর বালু উত্তোলন বিষয়ে গত কয়েক দিন আগে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
 

মন্তব্য করুন