রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রাঙামাটিতে

শতবর্ষীয় বটগাছ কাটা নিয়ে প্রশাসন ও এলাকাবাসী মুখোমূখি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শতবর্ষীয় বট গাছ কেটে ফেলা নিয়ে এলাকাবাসী ও প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে। রাঙামাটি শহরের পূর্ব ট্রাইবেল আদামে বট গাছ এলাকায় ৫০ শতক জায়গা প্রশাসন তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহন করে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসন ও আইন-শৃংখলাবাহিনী বট গাছ কাটতে গিয়ে এলাকাবাসীর বাঁধা পেয়ে বট গাছটি কাটতে পারেনি। এ নিয়ে প্রশাসন চার বার বট গাছ কাটতে গিয়ে ব্যর্থ হল। তবে প্রশাসনের দাবী বট গাছ কাটা নিয়ে প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়ার বিষয় নয়। গাছটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাতে গাছ কাটছে তা যেনো আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি নয় তা দেখতে প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন সেখনে গেছেন।    

জানা গেছে, শহরের চম্পকনগর-ট্রাইবেল-পৌরসভা সড়কে পূর্ব ট্রাইবেল আদামের রাস্তার পাশে  অবস্থিত জায়গাতে ৫০ শতক জমি স্থানীয় প্রিয় চাকমার কাছ থেকে ক্রয় করে তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের জন্য অধিগ্রহন করে তথ্য অফিস। এ ৫০ শতক জায়গার ওপর রয়েছে শতবর্ষীয় একটি বটবৃক্ষ।তাই এ অধিগ্রহনকৃত জায়গাতে থাকা বট গাছটি কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পুলিশ ও প্রশাসন বট গাছটি কাটতে যায়।  

এতে স্থানীয় শত শত লোকজন বটগাছটি ঘিরে রেখেছেন। শুধু পূর্ব ট্রাইবেল আদামের মানুষ নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও বটগাছটি রক্ষায় সেখানে লোকজন জুড়ো হয়েছেন। শেষ পর্ষন্ত লোকজনের বাধাঁ পেয়ে পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর ইসলাম ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোর্য়াদার ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এর আগেও তিন বার প্রশাসন বট গাছটি কাটতে গিয়ে বাঁধা পেয়ে চলে যান।  

এলাকাবাসীদের দাবী পূর্ব ট্রাইবেল আদামের বটগাছটি এলাকাবাসীর আবেগের। কারণ বটগাছের ছায়ায় প্রতিদিন শত শত মানুষ আড্ডা ও গল্প করে থাকেন। শুধু পূর্ব ট্রাইবেল আদামের লোকজন নয় পশ্চিম ট্রাইবেল আদামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন বটগাছের নিচে বিশ্রাম নিতে আসেন। তাই এ বট গাছটি কাটতে দিতে পারেন না। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের ধারণা বটগাছটি দেড়শত থেকে আড়াই শত বছর পুরাতন হতে পারে। তবে তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করতে যদি চাই বটগাছটি না কেটে করা যায়। তাছাড়া বট গাছটি অধিগ্রহণ জমির বাইরে। বট গাছের কিছু কিছু ডাল জায়গার ওপর পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল দেওয়ানসহ অনেকে জানান, বট গাছটি কাটার জন্য এ পর্যন্ত প্রশাসন  চার বার এসেছেন। লোকজনের বাধার মূখে কাটতে পারেননি। এ বট গাছটি কয়েক গ্রামের তীব্র তাপদাহের থেকে বাচতে অন্যতম বিশ্রামের আশ্রয়স্থল। তবে জমির মালিক প্রিয় জ্যোতি চাকমা জানান, তার স্ত্রী ও তাঁর দুই বোনের নামে ৫০ শতক জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছে। নিজেদের জমিতে ভবন নির্মাণে জন্য গাছ কাটবে। এলাকাবাসী অযথা ঝামেলা করছেন।

জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাঙামাটি জেলাসহ সারা দেশের ২৬টি জেলায় তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারণ ও অধিগ্রহন করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তথ্য অফিসের এসব করার কোন সুযোগ নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক গঙ্গাপ্রসাদ চাকমা জানান, বট গাছ কাটার জন্য বন বিভাগ থেকে কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে এ গাছটি কাটা হলে মামলা করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, বট গাছ কাটা বিষয়টি প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়ার বিষয় নয়। বট গাছটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন গেছে পরিস্থিতি যেনো অবনতি না ঘটে তা দেখতে। গাছ কাটতে নয়।

মন্তব্য করুন