চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

সীতাকুন্ডে আ'লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আ'লীগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বন্দর নগরীর প্রবেশদ্বার সীতাকুন্ড উপজেলা। ভৌগোলিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও এর গুরুত্ব বেশ।

আগামী ৮ মে দেশে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ প্রথম ধাপেই সীতাকুণ্ডে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রার্থীরা সে লক্ষ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৭ প্রার্থীর প্রত্যেকের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষিত হয়েছে।

প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রার্থীরা জোরে-শোরে প্রচার-প্রচারনায় নেমে পড়েছেন। শুরু হয়েছে ভোটের হাওয়া।প্রার্থীদের পোস্টারে ফেস্টুন ও ব্যানারে সমগ্র সীতাকুণ্ড ছেয়ে গেছে। দিনরাত তারা বিরামহীন জনসংযোগ, মিটিংসহ নানাভাবে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচেছন। মাইকিং করে ও প্রচার প্রচারনা জোরে-শোরে চলছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় এখানে তেমন নির্বাচনী আমেজ নাই বললেই চলে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী দিলে এখানকার চিত্র ভিন্ন হতো।

এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে জেলা ও ইউনিয়নের দুই নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এখানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে এবার চেয়ারম্যান পদে লড়াই হবে প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে। 

সীতাকুণ্ডে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা পদে মোট ৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এই উপজেলায় এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে ২ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং বাছাইয়ে সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

চেয়ারম্যান পদে চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু (দোয়াত-কলম) অপরজন হচ্ছে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আরিফুল আলম চৌধুরী  রাজু (আনারস)। এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে নির্বাচন করছেন সলিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাজী গোলাম মহিউদ্দিন (উড়োজাহাজ) ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহম্মদ (টিউবওয়েল) । 

নারী ভাইস চেয়ারম্যান (সংরক্ষিত) পদে নির্বাচন করছেন সীতাকুন্ড মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদিকা শাহিনুর আক্তার বিউটি (পদ্মফুল) উপজেলা শ্রমিক লীগের মহিলা সম্পাদিকা শামীমা আক্তার লাভলী (হাঁস) ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত হামিদা আক্তার (ফুটবল)।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২০১৯৩। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৬৭,৩৮৩ এবং মহিলা ভোটার ১,৫০,৭০৯ ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন ভোটার রয়েছে। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯২ ও বুথ রয়েছে ৬৮৭।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আরিফুল আলম চৌধুরী রাজু ১৯৯২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তিনি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ছিলেন সভাপতি।

বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাজু চৌধুরীর বাবা মরহুম দিদারুল আলম চৌধুরীও ছিলেন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম জহুর আহম্মেদ চৌধুরীর ভাগিনা ও ব্যক্তিগত সহকারী।

তিনি বলেন, আমি সীতাকুন্ড আসনের সংসদ সদস্য এস এম আল মামুনের দোয়া নিয়ে প্রার্থী হয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। জনগণ আমাকেই ভোট দিবে এবং বিপুল ভোটে আমি জয়লাভ করবো। 

তার প্রতিদ্বন্দ্বী চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ১৯৯১ সাল থেকে ১৭ বছর সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮২ সালে ছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সীতাকুন্ড ডিগ্রি কলেজের ভিপি। পরে তিনি জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাবা মরহুম মিছির আহমেদও ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রথিতযশা শিক্ষক। ১৯৯৬ সাল থেকে মহিউদ্দিন মঞ্জু প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে দলের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিবারই দল সেটার মূল্যায়ন করেনি। এবার তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, সীতাকুন্ড উপজেলার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত।

দলীয় একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলে বিভেদ আরও বাড়বে বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুন্ডে আওয়ামীলীগ রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি প্রায় ১৭বছর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জনগণ যার কাছে নিরাপদ, জনগণ তাকেই বেছে নেবে।

সীতাকুন্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বয়স ও রাজনীতিতে কনিষ্ঠ হলেও রাজু চৌধুরী বর্তমান সংসদ সদস্যের বিশ্বস্ত হওয়ায় তিনি হতে পারেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

অপরপক্ষের মত হচ্ছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন মঞ্জু দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সিনিয়র নেতা। নির্বাচনে যেহেতু অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি, এখানে ভোট পড়বে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও কিছু ভাসমান ভোটারের। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন।

কেননা জ্যেষ্ঠতার কারণে দলে বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গে থাকবেন। তা ছাড়া দীর্ঘ ১৭ বছর জনপ্রতিনিধি থাকায় তিনি পুরো এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। 

সীতাকুন্ড আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ এস এম আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই আওয়ামীলীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে। এছাড়া নির্বাচন আচরণবিধিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের এ নির্বাচনে প্রভাব কাটানোর কোন সুযোগ নেই। নির্বাচন সুস্থ ও গ্রহনযোগ্য হবে। তবে সৎ, যোগ্য এবং দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করবে এ প্রত্যাশা করবো। 

১৯৮৫ ইং প্রথম সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল কামাল, ১৯৯০ ইং দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইমতিয়াজ ইকরাম, ২০০৯ ইং তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও ২০১৪ ও ২০১৯ ইং চতুর্থ ও পঞ্চম  উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এস এম আল মামুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। 

২০০৯  ও ২০১৪ এ সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নাজমুন নাহার চৌধুরী নেলী ও ২০১৯ ও ২০২৩ ইং অক্টোবর পর্যন্ত জয়নব বিবি জলি দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ২০২৩ ইং অক্টোবর মাসে পদত্যাগ করলে চেয়ারম্যান পদটি শূণ্য হলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলিকে স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন

মন্তব্য করুন