বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বেগুনি ফুলকপি নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হেক্টরে বেগুনি ফুলকপির ফলন দাঁড়িয়েছে ২০ টনেরও বেশি।
অধ্যাপক হারুন বলেন, গবেষণার উদ্দেশ্যে বেগুনি ফুলকপির জার্মপ্লাজম আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করেছি এবং এটি দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় কেমন ফলন দেয়, তা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা সফলভাবে এটির চাষ করতে পেরেছি।
বেগুনি ফুলকপির চাষাবাদ সম্পর্কে অধ্যাপক বলেন, জৈব মালচিং পদ্ধতিতে এটি চাষ করা হয়েছে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে, যা মাছি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পোকা দমন করতে সহায়তা করে।
তিনি আরও জানান, কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার না করেই আমরা রঙিন ফুলকপি (বেগুনি) উৎপাদনের চেষ্টা করেছি। প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফুলকপির চারা রোপণ করা হয়েছে। এবারের ফলন প্রতি হেক্টরে ২০ টনেরও বেশি, যা সাদা ফুলকপির ফলনের সমান বা তার চেয়ে বেশি।
বেগুনি ফুলকপির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অধ্যাপক হারুন বলেন, এর রঙের জন্য এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্থোসায়ানিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, আর এতে থাকা অ্যান্টিকার্সিনোজেনিক যৌগ ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
তিনি আরও জানান, ফুলকপির পাতায় অন্যান্য সবজির তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি ফাইবার থাকে। এতে থাকা আইসোথায়োসায়ানাইটস উপাদান যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যদি কেউ প্রতি সপ্তাহে এক কেজি ফুলকপির পাতা খায়, তাহলে তার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁঁকি অর্ধেক কমতে পারে।
অধ্যাপক হারুন আরও বলেন, সাধারণ ফুলকপির তুলনায় বেগুনি ফুলকপি নরম এবং খেতেও সুস্বাদু। সাধারণত সাদা ফুলকপির পাতা খাওয়া হয় না, কিন্তু বেগুনি ফুলকপির পাতা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শাক হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
তিনি আরও দাবি করেন, সাধারণ ফুলকপির তুলনায় বেগুনি ফুলকপির পাতায় পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে, যা গরুর দুধের ক্যালসিয়ামের চেয়েও বেশি। এটি হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক এবং শিশু ও বয়স্কদের দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে, যদি নিয়মিত খাওয়া হয়।
গবেষণার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, বেগুনি ফুলকপির ওপর আরও গবেষণা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এর বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা যাচাই করার চেষ্টা করব।
আপনার মতামত লিখুন :