একীভূতকরণের মাধ্যমে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করেছে বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের জন্য গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্স। সীমিত শিক্ষা বাজেটের সঠিক ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার টাস্কফোর্স কমিটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের সেই সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের উচিত কিছু পাবলিক এবং কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একীভূত করা। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নত হয়। একীভূতকরণের মাধ্যমে, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ক্যাম্পাসে থেকে পরিচালিত হবে, তবে তারা একটি একক নাম নিয়ে কাজ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ১৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এর মধ্যে ৫৫টি পাবলিক এবং ১১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১৫ বছরে, বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে, বেশ কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই শিক্ষকদের অভাব, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বা ক্যাম্পাসের সংকটে রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা বাড়ানোর ফলে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ছয় বছরের ব্যবধানে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এ উঠে আসা এ তথ্য অনুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা ৯ লাখ ৬ হাজার। এর আগে ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে ৪ লাখ ৫ হাজার জন উচ্চশিক্ষিত বেকারের তথ্য উঠে এসেছিল। সে হিসেবে ছয় বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ ৪ হাজার। শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মতে মান নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর গবেষণা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য টাস্কফোর্সের এই সুপারিশটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একীভূতকরণ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
টাস্কফোর্সের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশগুলো তৈরিতে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই নিম্নমানসম্পন্ন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যেই এ একীভূতকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এবং কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা যেতে পারে। তবে একীভূতকরণের অর্থ এই নয় যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের ক্যাম্পাস আগের জায়গায়ই থাকবে। তবে তারা একই নামে পরিচালিত হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :